নমুনায়ন কী? নমুনায়নের সুবিধা ও অসুবিধা আলােচনা কর

অথবা, নমুনায়ন কাকে বলে? নমুনায়নের সবল ও দুর্বলদিক সমূহ আলোচনা কর।
অথবা, নমুনায়ন বলতে কী বুঝ? নমুনায়নের উপকারিতা ও সীমাবদ্ধতা আলোচনা কর।

উত্তর ভূমিকা : গবেষণার জন্য সমগ্রক হতে কতিপয় একক বাছাই করে সমগ্রক সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় । বাছাইকৃত এ একককে বলে নমুনা। যে প্রক্রিয়ায় একক বাছাই করা হয়, তাকে বলে নমুনায়ন।
নমুনায়ন : নমুনায়ন একটি প্রক্রিয়া বা পদ্ধতির নাম। এ পদ্ধতির জন্য সমগ্রক থেকে একটি নমুনা বাছাই করা হয়। নমুনায়ন সম্পর্কে জানার পূর্বে নমুনা প্রসঙ্গে জানা প্রয়োজন।

প্রামাণ্য সংজ্ঞা : নমুনায়ন সম্পর্কে বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি সংজ্ঞা প্রদান করা হলো।
S. P. Gupta R M. P. Gupta , “Sampling is only a total which helps to know the characteristics of the universe
or population by examining only a small part of it.” অর্থাৎ, “নমুনায়ন হলো সমগ্রকের একটি পরীক্ষালব্ধ অংশমাত্র যা সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে পারে। তারা নমুনায়নের সংজ্ঞায় সমগ্রক সম্পর্কে প্রতিনিধিত্বকে আলোচনায় এনেছেন। মূলত সমগ্রকের একটি উপযুক্ত প্রতিনিধি নমুনায়নের মাধ্যমে উপস্থাপন
করা যায়।”


G. R. Adams and J. D. Schvaneveldt , “Sampling is a process whereby one makes estimate or generalizations about a population based on information contained in a portion (a sample) of the entire population.”


Adams এবং Schvaneveldt নমুনায়নকে একটি প্রক্রিয়া হিসেবে দেখেছেন, যা পুরো সমগ্রক থেকে একটি অংশগ্রহণ করে এবং যা সমগ্রকের তথ্য সমৃদ্ধ। অর্থাৎ, নমুনায়ন সমগ্রকের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে, তবে এটি সমগ্রকের তুলনায় কম অংশ বিস্তার করে। এটি মূলত সমগ্রককে সংক্ষিপ্ত মাধ্যমে প্রকাশের একটি প্রক্রিয়া ।
Black Champion, “The process of drawing those elements from the larger population or universe is called sampling.” অর্থাৎ, “নমুনায়ন হলো বৃহত্তর সমগ্রক থেকে কিছু উপাদান বাছাই করার প্রক্রিয়া।”
নমুনায়ন প্রসঙ্গে Earl R. Babbie বলেছেন, “বৃহত্তর উপাদান সম্পর্কে সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার লক্ষ্যে বৃহত্তর উপাদান থেকে কপিয় উপাদান নির্বাচনের প্রক্রিয়াই হচ্ছে নমুনায়ন।”
Wilkinson and Bhandarkar , “The method of selecting for surely a portion (or a sample) of the universe with a view to drawing conclusion about the universe is known as sampling; sampling is only a part of the population.” উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি গাছে অনেক রকমের আম আছে। আম গাছ থেকে একটি আম সংগ্রহ করা হলে সে আমটি হবে ঐ গাছের নমুনা আম। আর নমুনা হিসেবে একটি আম সংগ্রহের প্রক্রিয়া হলো নমুনায়ন।


সুতরাং বলা যায়, সমগ্রক থেকে এর সকল বৈশিষ্ট্যের প্রতীক হিসেবে যে অংশ গবেষণার তথ্যসংগ্রহের জন্য বিজ্ঞানসম্মত বিশেষ প্রক্রিয়ায় গ্রহণ করে সমগ্রক সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য ব্যবহার করা হয় তাকে নমুনা বলে। আর যে প্রক্রিয়ায় এ নমুনা নির্বাচন করা হয় তাকে নমুনায়ন বলে। নমুনায়নের সুবিধা : নমুনায়ন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। নিম্নে নমুনায়নের সুবিধাগুলো আলোচনা করা হলো :
১. ব্যয় কম : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় ব্যয় কম। এ প্রক্রিয়ায় অনুসন্ধানকার্য পরিচালনার জন্য শুমারি জরিপ অপেক্ষা অনেক কম ব্যয় হয়। নমুনায়নে সমগ্রকের একটি অংশ নির্বাচন করা হয় বলে এর ব্যয় কম।
২. স্বল্প সময় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় শুমারি অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা অপেক্ষা স্বল্প সময় ব্যয় হয়। জরুরি বিষয়ে অল্প সময়ে অনুসন্ধানকার্য পরিচালনার জন্য নমুনায়ন অধিক ফলপ্রসূ। নমুনায়নে সুনির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা হয় বলে এতে স্বল্প সময় ব্যয় হয়।


৩. দ্রুত ফলাফল প্রদান : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় শুমারি অনুসন্ধানকার্য পরিচালনা অপেক্ষা দ্রুত ফলাফল প্রদান করা যায়। কোনো বিষয়ে যদি দ্রুত ফলাফল প্রদান সম্ভব হয়, তাহলে গবেষণাকার্য দ্রুত সম্পাদন করা যায়। নমুনায়নের মাধ্যমে কোনো বিষয়ে দ্রুত ফলাফল প্রদান করা যায়।


৪. কম শ্রম ব্যয় : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় কতিপয় বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এতে ব্যয় কম হয়। তাছাড়া স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায়। নমুনায়নে শ্রমও কম ব্যয় হয়।


৫. নির্ভরশীল : নমুনায়নে স্বল্প বিষয়ে গবেষণা করা হয়। স্বল্প বিষয় গবেষণার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এর ফলে নমুনায়নের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য বেশি নির্ভরশীল হয়।


৬. সঠিক তথ্য প্রদান : নমুনায়নে বাছাইকৃত অংশ পর্যবেক্ষণ করা হয়। এজন্য নমুনায়ন কোনো বিষয়ে সঠিক তথ্য প্রদানে সক্ষম।

৭. প্ৰশিক্ষণগত সুবিধা : নমুনায়নে অপেক্ষাকৃত কমসংখ্যক কর্মীর প্রয়োজন হয়। কেননা, এতে উপাত্তের সংখ্যা কম।

৮. গবেষণা মূল্যায়ন : এমন কিছু গবেষণা আছে যেখানে বারবার গবেষণা মূল্যায়নের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়াটি তত সহজ নয় । নমুনায়নের মাধ্যমে সহজেই গবেষণা মূল্যায়ন করা যায়।
৯. সহজ পরিচালনা পদ্ধতি : নমুনায়নে তথ্য কম; শ্রম কম ব্যয় হয়। দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের উপস্থিতিতে খুব সহজেই নমুনায়ন পদ্ধতি পরিচালনা করা যায়।
নমুনায়নের অসুবিধা : নমুনায়ন বহুল প্রচলিত পদ্ধতি হলেও এর কিছু অসুবিধা আছে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো :
১. প্রতিনিধিত্বের সমস্যা : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় সমগ্র অংশ থেকে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয় মাত্র। প্রতিনিধিত্বের এ প্রসঙ্গে থেকে যেতে পারে । অনেক সময় প্রতিনিধিত্বশীল একক কোনো বিষয়ে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে সঠিকভাবে কোন একক প্রতিনিধিত্ব করতে না পারলে কোনো বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না।
২. নমুনা প্রাপ্তির সমস্যা : নমুনায়নে ক্ষুদ্র অংশের বিচার বিশ্লেষণ করা হয়। সমগ্রক হতে যে কতিপয় বিষয় নমুনায়ন করা হয়, সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমেই গোটা বিষয় সম্পর্কে ধারণা করা হয়। অনেক সময় নির্বাচিত অংশ সমস্যা পারে না ।
পরবর্তীতে গবেষণার জন্য সহজভাবে পাওয়া যায় না।
৩. দক্ষতার প্রয়োজন : নঠিকভাবে নমুনায়ন প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য দক্ষতার প্রয়োজন । উপযুক্ত ও সঠিক নমুনা নির্বাচনের জন্য দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তির প্রয়োজন। আবার দক্ষ ব্যক্তির অপ্রতুলতাও রয়েছে।

৪. নমুনার বৈচিত্র্য : বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর সবকিছুই বিচিত্র। সমগ্রকে প্রতিটি একক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। নমুনায়নে নির্দিষ্ট বিষয়ে গবেষণা করা হয়। এ নির্দিষ্ট বিষয়ের সাথে অপরাপর বিষয়ের মিল না থাকার সম্ভাবনাই বেশি থাকে।

৫. বাস্তবতার অভাব : নমুনাঘুঁনে যে বিষয়ে গবেষণা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়, অপরাপর বিষয়ে সে সিদ্ধান্ত নাও আসতে পারে। ধরে নেওয়া হয় নমুনা একক যে ফলাফল দেয় অপরাপর বিষয় একই ফলাফল প্রদানে সক্ষম। কিন্তু এভাবে সিদ্ধান্ত নিলে ফলাফলে বাস্তবতার অভাব দেখা দেয়।


৬. পক্ষপাতিত্বের সমস্যা : নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় পক্ষপাতিত্বের সমস্যা অন্যতম সমস্যা। নমুনায়ন প্রক্রিয়ায় নির্বাচিত ব্যক্তিদের নিকট থেকে তথ্যসংগ্রহ করা হয়। তাই পক্ষপাতিত্বের সম্ভাবনা থেকে যায়।

৭. সমজাতীয়তার অভাব : নমুনায়নের আরেকটি সমস্যা হচ্ছে সমজাতীয়তার অভাব। নমুনায়নে গোষ্ঠী সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, কিন্তু স্বতন্ত্র বিষয়ে ধারণা লাভের জন্য নমুনায়ন ফলপ্রসূ নয়।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে আমরা বলতে পারি, নমুনায়নের একদিকে যেমন কতিপয় সুবিধা আছে, তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে। নমুনায়নে কিছু অসুবিধা থাকলেও এর সুবিধা বেশি। কোনো বিষয়ে অল্প সময় অর্থ, শ্রম, মেধা ব্যয় করে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নমুনায়ন অধিক ফলপ্রসূ।