নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।

অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের বিপ্লবী দর্শন কী?
অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের বিপ্লবী দর্শন সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের বিপ্লবী দর্শন তুলে ধর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
পৃথিবীতে অনেক দার্শনিক রয়েছেন যাদের দর্শন চিন্তা প্রকাশিত হয়েছে তাদের সাহিত্যের মধ্যে। বাঙালি ও পাশ্চাত্য দর্শনের ক্ষেত্রে এরূপ দেখা যায়। বাঙালি দার্শনিকদের দর্শন চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন কাব্যে, গানে, উপন্যাসে ও নাটকে। কাজী নজরুল ইসলামের দর্শন চিন্তাকে এভাবেই আমরা দেখতে পাই। তিনি তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে মানব চিন্তা চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, বঞ্চনা প্রাপ্তি প্রভৃতিকে আঞ্চলিকতার সীমা ডিঙিয়ে আন্তর্জাতিকতার পরিসরে টেনে নিয়ে এসেছেন। সমাজের সকল শ্রেণির জন্যই তিনি লেখনী ধারণ করছেন।
নজরুলের বিদ্রোহী চেতনা বা বিপ্লবী দর্শন : কাজী নজরুল ইসলামের মানবতাবাদী চিন্তাভাবনা দ্রোহের চেতনায় উজ্জীবিত। মানবতার কল্যাণের নিমিত্তে তিনি বিদ্রোহী বা বিপ্লবী মনোভাব পোষণ করেন। নিম্নে তার বিদ্রোহী বা বিপ্লবী দর্শন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
নজরুলের চিন্তা চেতনায় মিশে আছে তার প্রাথমিক জীবনের সকল অভিজ্ঞতা। যৌবনকালে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন যুদ্ধের ভয়াবহতা, বিদেশি শাসনের গ্লানি,বঙ্গভঙ্গ, খেলাফত আন্দোলন প্রভৃতি। এগুলো তাঁর বিদ্রোহী মনোভাব জাগ্রত করে। তিনি জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়েছেন। তাঁর লেখার মধ্যে ফুটে উঠেছে আত্মশক্তি ও বিদ্রোহী চেতনা। তিনি দেশের মানুষকে রক্ষার জন্য বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন বিদেশি শাসন শোষণের বিরুদ্ধে। তিনি বিদ্রোহী কবিতায় বলেছেন-
“আমি দুর্বার,
আমি ভেঙ্গে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল।”
তিনি বাঙালিকে তাঁর গতানুগতিক জড়তা, আড়ষ্টতা ঝেড়ে ফেলে সচল ও সক্রিয় হবার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি ছিলেন প্রগতিশীল ও আস্থাবান। তিনি সাধারণের দুঃখ দুর্দশা নিজের মতো করে উপলব্ধি করেছেন। তিনি তাঁর রুদ্র মঙ্গল গ্রন্থে বলেন, “জাগো জনশক্তি! হে আমার অবহেলিত পদপিষ্ট কৃষক, আমার মুটে মজুর ভাইরা। আনো তোমার হাতুড়ি, ভাঙ্গো ঐ উৎপীড়কের প্রাসাদ, ধূলায় লুটাও অর্থপিশাচ বলদর্পীর শির।”
তিনি বলেন
“ঐ দিকে দিকে বেজেছে ডংকা শঙ্কা
নাহিক আর।
মরিয়ার মুখে মরণের বাণী
উঠিছে মার মার।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, নজরুল ছিলেন সত্য, সুন্দর আর কল্যাণের পূজারী মানবতাবাদী দার্শনিক। তিনি কখনোই ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠা থেকে পিছপা হননি। তিনি সংগ্রাম করেছেন শোষণ নিপীড়নের বিরুদ্ধে, নিজেকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন বঞ্চিতদের দলে। তিনি তাঁর লেখনির মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন বিদ্রোহী চেতনা; প্রকাশ করেছেন বিপ্লবী মনোভাব। নজরুলের দর্শন দেশকালের সীমা পেরিয়ে পরিণত হয়েছে বিশ্ব মানবতাবাদে।