অথবা, ধর্ম কী?
অথবা, ধর্ম বলতে কী বুঝ?
অথবা, ধর্ম কাকে বলে?
অথবা, ধর্মের (Religion) কয়েকটি প্রামাণ্য সংজ্ঞা উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : ধর্ম একটি মৌল ও সার্বজনীন মানবীয় প্রতিষ্ঠান। এটি মানবসমাজের সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান। ধর্মের অস্তিত্ব নেই কিংবা ছিল না এমন কোনো মানবসমাজের কথা সমাজবিজ্ঞানী বা নৃবিজ্ঞানীদের জানা নেই মানবসমাজের বিভিন্ন পর্বে বিভিন্ন স্থানে ধর্মের বিচিত্র রূপ লক্ষ্য করা যায়। ধর্ম একাধিক এবং তাদের রূপ প্রকৃতিও ভিন্ন। কোনো ধর্ম একেশ্বরবাদী কোনোটি বহু ঈশ্বরবাদী আবার কোনোটিতে বা ঈশ্বর বিশ্বাস অনুপস্থিত। ধর্মের সাথে হৃদয় ও বিশ্বাসের যোগসূত্র নিবিড়। অনেকে নিজের ধর্মকে ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মকে ধর্ম বলে স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু ধর্মের বিজ্ঞান সম্মত আলোচনায় আবেগকে পরিহার করতে হবে।
ধর্ম : ধর্ম একটি বিমূর্ত বিষয়। ধর্মকে একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। কিন্তু ধর্মের বিভিন্নদিক বিশ্লেষণ করলে আমরা সহজ কথায় বলতে পারি যে, ধর্ম এমন একটি , নিয়মকানুন ও রীতিনীতি বা বিশ্বাস যা মানুষের আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং মানুষের জীবনকে সুন্দর, সৎ এবং নিষ্পাপ করে। অর্থাৎ, ধর্ম মানুষের জীবনকে রাখে সুন্দর, আদর্শবান যার ফলে সমাজে শান্তি বিরাজ করে। সুতরাং দেখা যায় যে, ধর্ম একটি
মৌল ও সর্বজনীন মানবীয় প্রতিষ্ঠান।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী ও নৃবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টা করেছেন। নিম্নে সংক্ষিপ্তভাবে তা বর্ণনা করা হলো :
নৃবিজ্ঞানী E. B. Tylor বলেছেন, “ধর্ম হচ্ছে অতিপ্রাকৃতে বিশ্বাস।” (Believe in supernatural beings.) নৃবিজ্ঞানী ফ্রেজার বলেছেন, “ধর্ম হচ্ছে অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস। আর এ শক্তি মানবজীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেন।” ফরাসি সমাজবিজ্ঞানী ডুখীম (Durkheim) তাঁর The Elementary Forms of Religions Life’ গ্রন্থে বলেছেন, “ধর্ম হলো পবিত্র বস্তু সম্পর্কিত কতকগুলো বিশ্বাস ও প্রথার সমষ্টি।” ডুর্খীমের এ সংজ্ঞা থেকে দু’টি বিষয়
লক্ষণীয় । যথা : ১. বিশ্বাস ও ২. আচার।
সমাজবিজ্ঞানী এস. রেডাইল বলেছেন, “ধর্ম হলো রহস্যবৃত মনের সাথে মানবমনের সম্পর্ক সৃষ্টির ভাবানুভূতিগত বন্ধনের নির্ধারণী। বিশ্ব ও ব্যক্তির উপর উক্ত শক্তির প্রভাবকে ব্যক্তি স্বীকার করে নেয় এবং সে মহাত্মার সাথে নিজের সম্পর্কের কথা বলে ব্যক্তি মত পুলকিত হয়।” অধ্যাপক ইয়ংগার (Yinger) তাঁর ‘Religion, Society and the Individual’ গ্রন্থে ধর্মের সংজ্ঞাকে ৩ ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
ক. মূল্যবোধ ভিত্তিক সংজ্ঞা : ধর্ম বলতে কি বোঝা উচিত। কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক এ বিষয়ে মন্তব্য পেশ করা। বিজ্ঞ ভিত্তিক বিশ্লেষণ এ জাতীয় নৈতিক মূল্যবোধ ভিত্তিক সংজ্ঞার কোনো গুরুত্ব নেই। কেননা, একজনের যা উচিত বা ঠিক অন্যজনের কাছে তা অনুচিত বা বেঠিক হতে পারে।
খ. বর্ণনামূলক সংজ্ঞা : এ ধরনের সংজ্ঞায় ধর্মের কোনো ছোট সংজ্ঞা পাওয়া না গেলেও এটা ধর্মের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধরে।
গ. ক্রিয়াবাদী সংজ্ঞা : ধর্ম কি বা এর বাজ কি তা বিশ্লেষণ করা হয়। মানবজীবনে দুঃখকষ্ট ছাড়াও আছে জন্ম, মৃত্যু। জীবনের উদ্দেশ্য কি বা কোথায় এবং এর শেষ মৃত্যু কি ইত্যাদি সম্পর্কে মানুষের জিজ্ঞাসার শেষ নেই। ধর্ম এসব জিজ্ঞাসার জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে। তাই বলা যায়, “ধর্মের যেখানে শুরু বিজ্ঞানের সেখানে শেষ।”
উপসংহার : উপর্যুক্ত সংজ্ঞাগুলোর আলোকে বলা যায় যে, ধর্ম সম্পর্কে, বিভিন্ন মতবিরোধ থাকলে ধর্ম মানবসমাজে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বিষয়। ধর্ম কতকগুলো বিশ্বাস ও আচার পদ্ধতি যা মানবজীবনের সমস্যা করে। সুতরাং ধর্মের গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।