উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ পরপর একটি পঞ্চবার্ষিকী ও একটি দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনার বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সুদৃঢ় অর্থনৈতিক অবকাঠামো নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল। এরই সাদাসিদে অনেক নির্ভরশীল তথ্য উপাত্ত ও বিশেষজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে ১৯৮০ সালের জুলাই মাসে দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়।
→ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো ঃ
১. গ্রামীণ এলাকায় উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিভিন্ন অবহেলিত জনগোষ্ঠী যেমন- ভূমিহীন, স্কুল বহির্ভূত শিশু ও কিশোর দুঃস্থ ও অসহায় নারী সম্প্রদায় প্রভৃতির কল্যাণে আয় উপার্জনকারী কার্যক্রম ও সার্বিক পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা।
২. শহর সমাজ উন্নয়ন কর্মসূচি জোরদারকরণের মাধ্যমে শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মানোন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ।
৩. দৈহিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে পঙ্গু ব্যক্তিদের আত্মনির্ভরশীল ও কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
৪. মানব সম্পদ উন্নয়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা।
৫; অবহেলিত ও অসহায় শিশুদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সুষ্ঠু লালন-পালন রক্ষণাবেক্ষণ ও শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা।
৬. ক্ষীণবুদ্ধি, অপরাধী, শৃঙ্খলা ও ক্ষতিগ্রস্ত শিশুদের পুনবার্সনের উদ্দেশ্য প্রাতিষ্ঠানিক সাহায্যের ব্যবস্থা করা।
৭. ভিক্ষাবৃত্তি ও ভবঘুরে রোধক প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা ।
৮. বেসরকারি সমাজসেবা কার্যক্রম জোরদার ও সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে স্বেচ্ছামূলক সংস্থাকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করা।
→ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচিগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো ঃ
১. পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অসুবিধাগ্রস্ত মানুষ যেমন সকুল বহির্ভূত কিশোর এবং যুবক মহিলা ভূমিহীন প্রভৃতিদের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচিকে ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এ জন্য এ খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখা হয় ২৭ কোটি ৯৩ লক্ষ্য টাকা। এ ক্ষেত্রে ১০৪ টি উপজেলার গ্রামীণ সমাজসেবা কার্যক্রমের
প্রসার এবং ১৯৬টি কমিউনিটি সেন্টারের মাধ্যমে শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়াও ৭০টি মহাকুমায় ৭০টি হস্তশিল্প কেন্দ্র খোলা হয়।
২. স্বেচ্ছামূলক সংস্থার জন্য সেবা কার্যক্রম ঃ দেশের স্বেচ্ছামূলক সংগঠনকে উৎসাহ সহায়তা ও সহযোগিতা প্রদান এ কর্মসূচির অন্তর্গত । এ খাতে সর্বোচ্চ অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ ১৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা।
৩. ভিক্ষুক ও ভবঘুরে প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন ঃ এ কর্মসূচির আওতায় সমষ্টি সংগঠনের ভিক্ষাবৃত্তি উচ্ছেদ এবং ভবঘুরেদের প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনের জন্য কেন্দ্র স্থাপনের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ উদ্দেশ্যে এ খাতে ৯ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
৪. শিশুদের কর্মসূচি ঃ এ কর্মসূচির আওতায় শিশুদের কল্যাণে শিশু সদন ও তৎসংলগ্ন সকুলের উন্নয়ন এবং বেবীহোম স্থাপনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ জন্য বরাদ্দ করা হয় ৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ।
৫. মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহণ করে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মানব সম্পদ উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ খাতে ৩৩ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয় ।
৬. প্রশাসনিক দক্ষতাসৃষ্টিমূলক কর্মসূচি ঃ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার এ খাতে বরাদ্দ ধরা হয় ১০ কোটি টাকা ।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, বাংলাদেশ দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা শুরু করে ১৯৮০ সালের জুলাইয়ের দিকে এবং শেষ
হয় ১৯৮৫ সালে। এ পরিকল্পনার জাতীয় পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় ।