দ্বিজাতি তত্ত্বে কী বলা হয়েছে?

অথবা, দ্বিজাতি তত্ত্বের মর্মকথা কী?
অথবা, দ্বিজাতি তত্ত্ব কী?
অথবা, দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারত একটি বিশাল রাষ্ট্র এবং এতে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, পেশা, বৃত্তি, শ্রেণির বিভক্তি রয়েছে। এদের আচার-অনুষ্ঠান, ধর্ম, সংস্কৃতি, সামাজিক রীতিনীতি ভিন্ন। ব্রিটিশদের শাসনের পূর্বে তাদের মধ্যে আঞ্চলিক চেতনা ছিল। অর্থাৎ ইংরেজদের আসার পর তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। কিন্তু ভারতীয়রা অখণ্ড ভারতকে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তে ঐক্যবদ্ধ হতে ব্যর্থ হতে থাকে। এর ফলে একটি বিষয় স্পষ্ট হতে থাকে যে ভারতে একটিমাত্র জাতি নয়, দুটি পৃথক জাতি রয়েছে। দ্বিজাতি তত্ত্ব এ কথাটিই শক্ত ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৩৯ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের ঘোষণা দেন।
দ্বিজাতি তত্ত্বের মর্মকথা : মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ দ্বিজাতি তত্ত্বের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেন ভারতে হিন্দু ও মুসলমান কখনো একটি জাতি ছিল না, তারা সম্পূর্ণ পৃথক দুটি রাষ্ট্র। তিনি হিন্দু ও মুসলমান এর ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি, সামাজিক প্রথা সাহিত্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের ঐতিহাসিক সূত্র থেকে আগত বলে মন্তব্য করেন। তাদের মহাকাব্য, জাতীয় বীর, ঐতিহাসিক জয় পরাজয় এর কাহিনী সম্পূর্ণ ভিন্ন, এক সম্প্রদায় এর কাছে যা বিজয় অপরের কাছে তা পরাজয়, এক সম্প্রদায় এর কাছে যে বীর বলে খ্যাত অপরের কাছে সে অখ্যাত, অসমাদৃত। সুতরাং এ দুই সম্প্রদায়কে একত্র করে একটি একক রাষ্ট্র গঠন করলে তা নিশ্চিত ধ্বংসের পথে পরিচালিত হবে। তার কারণ হিসেবে তিনি আরো বলেন, যে সংবিধান হিন্দু প্রধান সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার সৃষ্টি করবে সেই সংবিধানকে ভারতের মুসলমানরা কখনো মেনে নিতে পারে না। জিন্নাহ দৃঢ়তার সাথে ঘোষণা করেন যে, জাতি সম্পর্কিত যেকোনো সংজ্ঞায় মুসলমানরা একটি জাতি। তাদের স্বদেশ, তাদের ভূখণ্ড অবশ্যই থাকবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের মূল বক্তব্য হলো ভারতের মুসলমানরা শুধু ধর্মীয় দিক থেকে পৃথক নয় বরং তারা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির দিক থেকে সম্পূর্ণ একটি পৃথক জাতি এবং এ সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় এর পৃথক স্বার্থ ও দাবি রয়েছে যা রক্ষার জন্য সরকারকে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ও গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।