দ্বিজাতি তত্ত্বের প্রবক্তা কাকে বলা হয়?

অথবা, দ্বিজাতি তত্ত্ব সম্পর্কে যা জান লিখ ।
উত্তর৷ ভূমিকা :
ভারত একটি বিশাল রাষ্ট্র এবং তাতে ভিন্ন ধর্ম, পেশা, বৃত্তি, শ্রেণির মানুষ রয়েছে এবং এদের আচার-অনুষ্ঠান, রীতিনীতি, সামাজিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভিন্ন। এদের স্বার্থ, অধিকার, দাবি ছিল ভিন্ন তাই পরবর্তীতে এসব সম্প্রদায়কে নিয়ে অখণ্ড ভারত রাষ্ট্র গঠনের সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
পটভূমি : ঊনবিংশ শতকের দিকে ভারতের দুটি সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক অস্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। গোঁড়া হিন্দু জাতীয়তাবাদী চেতনা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ঘনীভূত করতে থাকে। মুসলমানদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দাবি ও আন্দোলন সর্বদা হিন্দুজাতীয়তাবাদী কংগ্রেস দ্বারা বাধাপ্রাপ্ত হয় । ১৯৩৭ সালের নির্বাচনের পর মুসলমানদের স্বার্থে চূড়ান্ত আঘাত আসে। কংগ্রেস এককভাবে মন্ত্রিসভা গঠন করে এবং ভারতের সর্বত্র অফিস আদালতে বন্দে মাতরম সংগীত, কংগ্রেস এর পতাকা উত্তোলন এবং হিন্দি ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করে। এর ফলে মুসলমানদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ে।
প্রবক্তা : এ প্রেক্ষিতে ভারতে মুসলমানদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এবং স্বার্থ সংরক্ষণ করতে মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৩৯ সালে তার দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণা করেন।
বিতর্ক : যদিও সর্বপ্রথম স্যার সৈয়দ আহমদ ১৮৮২ সালে ভারতে দুটি পৃথক জাতির উল্লেখ করেন, মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচনের দাবি করেন এবং পৃথক রাজনৈতিক দল গঠনের পরামর্শ দেন। তথাপি ১৯৩৯ সালে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, হিন্দু ও মুসলমান কখনো একটি জাতি ছিল না, তারা দুটি সম্পূর্ণ পৃথক জাতি। হিন্দু ও মুসলমানদের ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও সামাজিক প্রথা, সাহিত্য সম্পূর্ণ ভিন্ন ঐতিহাসিক সূত্র থেকে আগত, তাদের মহাকাব্য, জাতীয় বীর, ঐতিহাসিক জয় পরাজয় কাহিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ সম্প্রদায়ের কাছে যা বিজয় অপরের কাছে তা পরাজয় হিসেবে পরিগণিত হয় এবং সম্প্রদায়ের কাছে যে ব্যক্তি বীর বলে খ্যাত অন্য সম্প্রদায়ের কাছে সে অসমাদৃত। এ দুটি সম্প্রদায়কে একত্র করে একক রাষ্ট্র গঠন করলে পরবর্তীতে এরা তাকে ধ্বংসের দিকে টেনে নিয়ে যাবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জিন্নাহ এর দ্বিজাতি তত্ত্ব ঘোষণার মাধ্যমে ভারতের মুসলমানরা ভারতের সকলকে এটি জানিয়ে দেয় যে, ভারতের মুসলমানরা সম্পূর্ণ পৃথক ধর্ম, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, সামাজিক প্রথা ও রীতিনীতি সংবলিত জাতি এবং এ সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায় এর পৃথক দাবি ও স্বার্থ রয়েছে যা সরকারকে পৃথক দৃষ্টিভঙ্গি ও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।