অথবা, দারিদ্র্য বিমোচনে ও উন্নয়নের সম্পর্ক সম্পর্কে লিখ।
অথবা, দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়নের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক উল্লেখ কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। দেশকে দারিদ্র্য মুক্ত করতে পারলেই অর্থনৈতিকভাবে উন্নত হবে। দারিদ্র্যই উন্নয়নের প্রতিবন্ধক। একে দূর করতে পারলে বাংলাদেশ উন্নতির দিকে যাবে।
দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন : ঘনবসতিপূর্ণ ও সীমিত সম্পদের এদেশে ২০০৫ সালে চরম দারিদ্র্যের হার (মাথা-গণনা পদ্ধতিতে) ছিল শতকরা ৪০.৪ (বাংলাদেশের খানা আয় ও ব্যয় জরিপ HIES ২০০৫ অনুযায়ী) যা ২০১০ এ নেমে দাঁড়িয়েছে ৩১.৫ শতাংশ (বাংলাদেশের খানা ব্যয় জরিপ HIES ২০১০ এর প্রাথমিক হিসাব মতে)। অপরদিকে, UNDP – Human Development Report ২০১০ এর তথ্য মতে Multi-dimensional Poverty Index (MPI) এ বাংলাদেশের খানা ছিল ০.২৯১। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০১৩ ও ২০২১ সালের মধ্যে এ দারিদ্র্যের হার যথাক্রমে ২৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অতি দারিদ্র্যের জন্য টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা, অন্তত ২০১৭ সালের মধ্যে সম্পূর্ণভাবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসভিজি) অর্জন, দীর্ঘমেয়াদি রূপকল্প হিসেবে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন (২০১০-২১) এবং ২০১১-২০১৫ মেয়াদের জন্য প্রস্তাবিত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এর বিষয়ে সরকারের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। এ উদ্দেশ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দারিদ্র্য নিরসন কার্যক্রমসমূহের ব্যয় বাবদ মোট বরাদ্দ রয়েছে ৭৫.০০১ কোটি টাকা যা মোট বাজেটের ৫৭.৫০ শতাংশ। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মোট ১৫,৪০৮.১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর আওতায় বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা, দুস্থ মহিলাদের ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা সম্মানীসহ আরো
১১টি কার্যক্রম রয়েছে। এছাড়াও দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে আশ্রায়ন প্রকল্প, একটি বাড়ি একটি খামার, ঘরে ফেরা, মহিলাদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে দারিদ্র্য ও ক্ষুধা’ সংশ্লিষ্ট ১নং এমভিজি অর্জনের পথে অগ্রগামী আছে। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে পল্লি কর্ম সহায়তা ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), বিভিন্ন
ব্যাংক এবং NGO সংশ্লিষ্ট রয়েছে। ৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক ও দুটি বিশেষায়িত ব্যাংকের ডিসেম্বর ২০১০ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৯,১৮৬.৬৯ কোটি টাকা এবং আদায়ের পরিমাণ ২০,৪৭৫.৮১ কোটি টাকা। সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ/সংস্থার মাধ্যমে ডিসেম্বর ২০১০ পর্যন্ত ক্রমপুঞ্জিত ঋণ বিতরণের পরিমাণ ৮১,৫০৮.৪৮ কোটি টাকা ও ঋণ আদায়ের পরিমাণ ৭০,৮৩০.০৯ কোটি টাকা। দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচি টেকসই করাসহ অন্যান্য কার্যক্রম বাস্তবায়নে অর্থ বিভাগসহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাসমূহের প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, বাংলাদেশকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করে উন্নতির পথে ঠেলে দেওয়া সম্ভব। দারিদ্র্য বিমোচন না করে কখনই এ দেশকে উন্নতির পথে পাড়ি জমানো যাবে না