অথবা, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ সরকার ও এনজিও কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে? আলোচনা কর।
অথবা, দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ সরকার ও এনজিওজিগুলোর গৃহীত পদক্ষেপসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : সমসাময়িককালে দারিদ্র্য একটি বহুল আলোচিত বিষয়, যা মানবতার প্রতি একটি বড় অভিশাপ। আধুনিক মানবসভ্যতার বিকাশে দারিদ্র্য একটি মারাত্মক অন্তরায়। অনুন্নত ও তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিশেষ করে বাংলাদেশের অনুন্নয়নের অন্যতম প্রধান কারণ হলো দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের দিক থেকে শীর্ষ স্থানীয় ১৩টি দেশের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ। এ কারণে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি শিশু প্রায় ৬৫০০ টাকা বিশ্ব ব্যাংকের ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে ভূমিষ্ঠ হচ্ছে। আর এ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার লক্ষ্যে বর্তমান বিশ্বে ‘দারিদ্র্য বিমোচন’ (Poverty alleviation) একটি সামাজিক আন্দোলনে (Social movement) রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এ সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান : বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. পল্লি কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন : ১৯৯০ সালে স্থাপিত প্রতিষ্ঠানটি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে লক্ষ্যভিত্তিক দারিদ্র্যের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে আসছে। ঋণ প্রদান কার্যক্রমের মধ্যে ভাঙা, নার্সারি, বেতের কাজ, গরু মোটাতাজাকরণ, হাঁসমুরগি পালন, রিকশা ও ভ্যান ক্রয় এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র ব্যবসায় উল্লেখযোগ্য।
২. BRAC : ১৯৭২ সালে ত্রাণ কার্যক্রমে গঠন করা ব্র্যাক আজ বহুমুখী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ঋণ প্রদান শিশু ও বয়স্কদের জন্য অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, মহিলাদের অধিকার সম্পর্কীয় আইনগত পরামর্শ দান। ডিসেম্বর ৯৮ পর্যন্ত এটি ২৭.৯০ লক্ষ পরিবারকে ঋণ প্রদান করেছে, কয়েক হাজার মহিলাকে ধাত্রী
প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং কয়েক হাজার প্রাথমিক স্কুল স্থাপন করেছে।
৩. স্বনির্ভর বাংলাদেশ : ১৯৭৫ সালে স্থাপিত এ সংস্থাটি ঋণদান কর্মসূচির পাশাপাশি জন্মনিয়ন্ত্রণ, মাতৃ ও শিশু পরিচর্যা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে ১৬৭টি থানায় ১১,২১০টি গ্রামে কমিটি স্থাপনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
৪. প্রশিকা : ১৯৭৬ সালে স্থাপিত এ সংস্থাটি বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে ঋণপ্রদান, মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন ও পশু সম্পদ উন্নয়ন, ত্রাণ প্রদান, গৃহায়ন, সেচ কর্মসূচি, রেশম সম্পদ উন্নয়ন, নলকূপ স্থাপন, বিবরণ ও সামাজিক বনায়ন ইত্যাদি ।
৫. গ্রামীণ ব্যাংক : ১৯৮৩ সালে এক অর্ডিন্যান্সের মাধ্যমে এ ব্যাংক স্থাপিত হলেও এর কার্যক্রম একটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতির অধীনে ১৯৭৬ সালে শুরু হয় এবং বিত্তহীনদের সংগঠিত করে ঋণের মাধ্যমে তাদের আয়, পুঁজি ও সম্পদ গঠনের উদ্দেশ্যে এর কার্যক্রম বিস্তারলাভ করে। সরকার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ এর মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করে আসছে। নিম্নে এটা দেখানো হলো :
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষাপটে বলা যায় যে, দারিদ্র্য বিমোচন একটি ব্যাপক সামাজিক আন্দোলনের রূপ নিয়েছে, যা প্রতিরোধে সরকারি ও বেসরকারি মহল রীতিমত হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, যার ফলশ্রুতিতে এ মহলসমূহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে, যা কিছুটা হলেও কার্যকর। তবে এ পদক্ষেগুলো আরও কার্যকর এবং
ফলপ্রসূ করার জন্য দক্ষ ব্যবস্থাপনা, নিরপেক্ষ প্রশাসনব্যবস্থা, ফলপ্রসূ পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা দরকার। কারণ বাংলাদেশে একটা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু তা কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা অনুসরণ করে না। তাই সঠিক সময় প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়াটাই হলো ফলপ্রসূ পরিকল্পনা। আবার রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে পূর্ববর্তী সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ পরবর্তী স্বকার বাদ দিয়ে থাকে, যা প্রকল্প বাস্তবায়নের একটা অন্যতম বড় সমস্যা।