উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালাম বিরচিত ‘পথ জানা নাই’ গল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : এখানে গল্পকার আমাদের সমাজে মানুষের যে অবমূল্যায়ন হয় সে সম্পর্কে এ মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষণ : শামসুদ্দীন আবুল কালাম তাঁর ‘পথ জানা নাই’ গল্পে বাংলাদেশের একটি দরিদ্র গ্রাম মাউলতলার সহজ সরল অশিক্ষিত মানুষদের জীবনচিত্র তুলে ধরেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্ব পর্যন্ত মাউলতলার জনসাধারণ ছিল নিস্তরঙ্গ জীব। দেশের রাজনৈতিক উত্থানপতনের কোন ঢেউ মাউলতলার গায়ে লাগত না। ইংরেজ শাসনের শেষ দিকে একটি রাস্তা নির্মিত হওয়ায় আধুনিক জীবনের পাদপীঠ শহরের সাথে মাউলতলার যোগাযোগ স্থাপিত হলো। ফলে এই গ্রামের উপর প্রভাব পড়ল নাগরিক সভ্যতার কৃত্রিমতার। কারও কারও আয়ের পথ প্রশস্ত হলেও গ্রামে রোগব্যাধি, ঝগড়া, ফ্যাসাদ, মামলা মকদ্দমা প্রভৃতি বৃদ্ধি পেল । প্রশাসনে নিযুক্ত সরকারি কর্মচারীরা গ্রামে আসতে শুরু করল এবং ঘুষের টাকায় পকেট ভরে ফিরে যেতে লাগল। শহরের সাহেবের বার্বুচিখানায় কাজ করে যে লুৎফর তার সাথে আসগর উল্লার সোমত্ত মেয়ে কুলসুম পালিয়ে গেল। এমনি সময় শুরু হলো যুদ্ধ। তার ঢেউ মাউলতলায় এসেও লাগল। এ দেশের ইতিহাসে এটি এই প্রথম। রাজ্য স্বার্থ নিয়ে ভাঙাগড়ায় এসব গ্রামের পূর্বে কোন পরিবর্তন ঘটেনি কোনদিন। কিন্তু অতীতের শত শত বছরে যা ঘটেনি, দুইশত বছরের ইংরেজ শাসনের ফলে এবার এখানে তা-ই আত্মপ্রকাশ করল। চালডালসহ প্রত্যেকটি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ল। দাম বাড়ল সব জিনিসের, কেবল কমল জীবনের অর্থাৎ মানুষের। দুর্ভিক্ষের করাল ছোবলে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হলো। অভাবের সাথে যুদ্ধ করে করে মানুষ হয়রান হতে লাগল। তাদের সাহয্যে কেউ এগিয়ে এল না। সব জিনিসের দাম বেড়ে গেল, কিন্তু মানুষের জীবনের দাম গেল কমে।
মন্তব্য : আমাদের সমাজে মানুষের মূল্য নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যে মূল্য সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য তার চেয়ে কম।