তৃণমূল পর্যায়ের নারী আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, নারী আন্দোলনে তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড আলোচনা কর।
অথবা, তৃণমূল পর্যায়ের নারী আন্দোলন সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, নারী আন্দোলনে তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলোর কার্যক্রম বর্ণনা কর।
অথবা, তৃণমূল পর্যায়ের নারী আন্দোলন সম্পর্কে বিবরণ দাও।
উত্তরা৷ ভূমিকা :
বর্তমানে তৃতীয় বিশ্বে নারীর ক্ষমতায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট তৃণমূল পর্যায়ের বিভিন্ন সংগঠন, নারীবাদী লেখক ও কর্মীরা নারীর ক্ষমতায়নের উপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকেন। নারীবাদী লেখক, নারী সংগঠনসমূহ লৈঙ্গিক সম্পর্কের পরিবর্তন, অর্থাৎ লৈঙ্গিক বৈষম্য বিলোপসাধনকে নারীর ক্ষমতায়নের উপায় বলে চিহ্নিত করেছেন। তৃণমূল পর্যায়ের সংগঠনগুলো সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জনগণের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত প্রত্যয়টি ব্যবহার করে থাকেন। স্থানীয় বিচারব্যবস্থা, স্থানীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ, স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রতিনিধিত্ব বৃদ্ধি, সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত দাবি আদায় এবং উচ্চ মজুরি বা ইতিবাচক শর্তযুক্ত কাজের জন্য দাবি জানানোর সামর্থ্যকে ‘রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন’ হিসেবে বর্ণনা করা যায়।
তৃণমূল পর্যায়ে নারী আন্দোলন : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে যেসব স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে আলোচনা করা দরকার। এখানে নারী উন্নয়নের চারটি ক্ষেত্র, ১. স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা, ২. গ্রামীণ ঋণ ও আয় বৃদ্ধি, ৩. শিক্ষা ও সাক্ষরতা কর্মসূচি এবং ৪. সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ। এ
সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা : দাবি করা হয় যে, NGO দের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচির বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহার প্রাধান্য পেয়েছে। এসব সামগ্রী ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যাই বেশি। এ তথ্যটি রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক থেকে একটা নির্দেশক হতে পারে যে, নারী তার নিজের শরীরের উপর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে পারে না অথবা বিদ্যমান লৈঙ্গিক সম্পর্কের কারণে পুরুষ জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহারে আগ্রহী নয় ।
২. গ্রামীণ ঋণ ও আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা : গ্রামীণ ঋণদান কর্মসূচির মাধ্যমে আয় সৃষ্টি বাংলাদেশের কয়েকটি বৃহৎ NGO কর্তৃক প্রবর্তিত কর্মসূচির অন্যতম একটি পুরনো পদ্ধতি। নানা ধরনের সমালোচনা সত্ত্বেও এ পদ্ধতিটি তৃণমূল পর্যায়ে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতার অঙ্গনে প্রবেশের এখন পর্যন্তও অন্যতম প্রশস্ত পথ। ঋণদান কর্মসূচির ফলে গ্রামীণ মেয়েরা আরো স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে। উঠছে তাদের অংশগ্রহণ ও ক্ষমতায়নের দাবি। ঋণ পদ্ধতির বিভিন্ন দিকগুলো হলো :
ক. ঋণ সংগ্ৰহ : ঋণ সংগ্রহ করতে নারীদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ঋণ বিতরণকারী অনেক সংগঠনই অভিযোগ করে থাকে যে, যেহেতু পরিবারে লৈঙ্গিক বৈষম্য বিরাজমান, ফলে স্বামীরা প্রায়ই স্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে নেয় এবং তাদের ইচ্ছেমতো তা ব্যবহার করে। এ কারণে অনেক সময় নারীরা ঋণী অবস্থায় গ্রুপ ছাড়তে অথবা তার আয় বৃদ্ধির কর্মকাণ্ড ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
খ. ঋণের মহাজনি চরিত্র : নারীকে দেয়া ঋণ অনেকটা যেন মহাজনি চরিত্র পেয়ে যাচ্ছে। NGO গুলোর মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত যারা অপেক্ষাকৃতভাবে গরিব তাদের কাছে টাকা খাটানো। কিন্তু কোন কোন ক্ষেত্রে ঘটছে এর বিপরীত। টাকা আদায়ের প্রক্রিয়াও কখনো কখনো নির্যাতনমূলক হয়ে উঠেছে। এটা একটা বড় সমস্যা। গ্রুপ গঠনের যে অন্যতম উদ্দেশ্য পেশাদার মহাজনের কাছ থেকে মুক্তি অর্জন, উল্লিখিত তৎপরতা সে প্রক্রিয়াকে নিঃসন্দেহে ব্যাহত করে।
৩. শিক্ষা ও স্বাক্ষরতা কর্মসূচি : শিক্ষা ও স্বাক্ষরতা প্রণয়ন কর্মসূচির মধ্যে স্বাক্ষরতা কর্মসূচিটিই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। সম্প্রতি এর সাথে যুক্ত হয়েছে NGO দের সচেতনতা সৃষ্টির কার্যক্রম। এর মধ্যে রয়েছে নেতৃত্বের প্রশিক্ষণ, ভোটাধিকার সম্বন্ধে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আইনি সহায়তা দান কর্মসূচি। তবে দেখা যায় পাঠ্যসূচি হিসেবে এসব যুক্ত করার
ফলে সম্পূর্ণ কর্মসূচিটি বেশ ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
৪. সচেতনতায়ন ও দক্ষতার প্রশিক্ষণ : সচেতনতা সৃষ্টি ও দক্ষতা সৃষ্টির প্রশিক্ষণ ছিল NGO দের সবচেয়ে প্রশিক্ষণ সাধ্য কর্মসূচি। এ কর্মসূচি নারীকে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হতে সহায়তা করেছে। তবে NGO গুলোর মধ্যে একই এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তা ছড়িয়ে দেয়া হলে সকল গ্রুপের কার্যক্রমের ধরনের মতাদর্শগত ধারণা কাজ কর মধ্যে সম্ভাবনার একটি ভিত্তি খুঁজে পাওয়া যেত। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই এর অভাব লক্ষ্য করা যায়। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি যে, খুলনার নারীরা চিংড়ি চাষিদের বিরুদ্ধে, নোয়াখালীতে ভূস্বামীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে থাকে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সচেতনতার দিক থেকে মতাদর্শিকভাবে একটি অখণ্ড চেতনা নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে সবাই সচেতন নয়। আসলে সচেতনতা সৃষ্টির কর্মসূচিগুলো অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে বিদ্যমান কর্মসূচির সাথে যুক্ত করা হয় এবং এজন্য এ সচেতনতা সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি কখনো কখনো খণ্ডিত হয়ে পড়ে। অথচ এসব কর্মকাণ্ড হতে পারতো রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের চালিকাশক্তি। উপযুক্ত প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জনের জন্য তাই ক্ষমতায়ন বিরোধী সমস্যাগুলোকে প্রথমে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। পরে সেসব সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখাই রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সংক্রান্ত কর্মসূচির প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের স্বল্পমেয়াদি এসব পদক্ষেপ গ্রহণের দিকগুলো বাদে আরো কিছু এলাকা আছে যেখানে ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া কার্যকর করার জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%be-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%a8%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a6%bf/