উৎস : বক্ষ্যমাণ অংশটুকু মননশীল প্রাবন্ধিক কাজী আবদুল ওদুদ বিরচিত ‘বাংলার জাগরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা
প্রসঙ্গ : প্রবন্ধকার বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিতাদর্শ ও ধর্মচিন্তার মূলে যে স্বদেশপ্রেম কাজ করেছিল সে প্রসঙ্গে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর লেখনীর মাধ্যমে বাঙালি জীবনের উপর নব জাগরণের একটি স্থায়ী রূপ রেখে গেছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি সাহিত্যসম্রাট হিসেবে পরিচিত। সাহিত্য সাধনায় তিনি কবিজনসুলভ স্বাপ্নিক ছিলেন না। বাস্তবতা এবং স্বদেশপ্রেম তাঁর সাহিত্যের প্রধান উপজীব্য হিসেবে দেখা দিয়েছিল। তিনি ছিলেন চিত্রকর ও বাস্তববাদী স্বদেশপ্রেমিক। তাই তাঁর অমর কীর্তি ‘আনন্দমঠে’ হয়ত নায়ক নায়িকার গুঢ় আনন্দ বেদনার রেখাপাত তেমন নেই; হয়ত এমন কোন সৌন্দর্য মূর্তি আঁকা হয় নি যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষের নয়নে প্রতিভাত হবে সৌন্দর্যের অপার বিস্ময় হিসেবে। তবু এটি অমর এ জন্য যে এতে যেন লেখক কী এক আশ্চর্য ক্ষমতায় পাঠকের সামনে প্রসারিত করে ধরেছেন দেশের দুর্দশামথিত তাঁর রক্তাক্ত হৃদয় যে হৃদয় তাঁর সুগভীর বাস্তবতার জন্যই সৌন্দর্যের এক রহস্যময় খনি। তাঁর অন্যান্য উপন্যাসেও এ প্রবণতা লক্ষ করা যায। সাহিত্য সৃষ্টির মধ্য দিয়ে তিনি দেশবাসীকে স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর লেখা ‘বন্দেমাতরম’ সঙ্গীত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সঞ্জিবনী শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। মোটের উপর তিনি ছিলেন একজন নিপুণ চিত্রকর ও বাস্তববাদী স্বদেশপ্রেমিক।
মন্তব্য : বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর রচনার মাধ্যমে জাতিকে স্বদেশপ্রেমে দীক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।