অথবা, তরিকত ও হকিকতের সংজ্ঞা দাও।
অথবা, তরিকত ও হকিকতের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
অথবা, তরিকত ও হকিকত সম্পর্কে যা জান সংক্ষেপে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : সুফিবাদ হলো প্রেমের দর্শন। এ মতানুসারে আমাদের জীবনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আল্লাহর নৈকট্য লাভ। সুফিবাদ তাত্ত্বিক দিকের চেয়ে ব্যবহারিক দিকের উপর বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই একজন সুফিকে শিক্ষার জন্য কিছু স্তর অতিক্রম করতে হয়। এই স্তরগুলোর মধ্যে তরিকত ও হকিকত অন্যতম।
তরিকত : তরিকত বলতে বুঝায় নির্দিষ্ট পথ। শরীয়তের বিভিন্ন বিধানাবলি পালনের ফলে সুফির কাছে যে বিষয়টি উন্মোচিত হয় তা হলো তরিকত। তরিকত শরীয়তের পরের ধাপ। এটি শরীয়তের চেয়ে উন্নত ও উচ্চতর। এ স্তরে সুফি তার সাধনার দিক নির্দেশনার জন্য পীর বা মুরীদের কাছে সাহায্য কামনা করেন। এ পর্যায়ে পীরের নির্দেশ বিনা বাক্যব্যয়ে মুরিদ পালন করতে প্রস্তুত হয়। পীর মুরিদের সামর্থ্যানুযায়ী ওয়াদা বা করণীয় নির্ধারণ করেছেন। সে অনুযায়ী মুরিদ তার সাধনা চালিয়ে যেতে থাকে।
হকিকত : মারেফতের পরবর্তী স্তর হলো হকিকত। হকিকত হলো এমন একটি বিষয় যেটির মাধ্যমে সুফি প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। হাকিকতের স্তরে সুফি সত্য উপলব্ধি করেন। আল্লাহর অপর করুণার উপরই এ উপলব্ধি নির্ভর করে। এ কথা অবশ্যই সত্য যে, আল্লাহর অসীম রহমত ছাড়া কেউ তার জ্ঞানের বিন্দুমাত্র অবহিত হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে বাহ্যিকভাবে ধর্মীয় আচার-আচরণ পালনের মাধ্যমে হকিকতের বা প্রকৃত জ্ঞান পাওয়া সম্ভব। হকিকতের জ্ঞান হলো আল্লাহ্ হলেন পরম সত্য এবং বাকি সব তার শক্তির প্রকাশ মাত্র। একজন সুফি ফানা ও বাকার স্তর অতিক্রম করে হকিকতের জ্ঞান লাভে সমর্থ হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সুফিবাদ হচ্ছে এক ধরনের মরমি চিন্তাধারা। এ চিন্তাধারা সমাজের সমস্ত লোকের মাঝে পরিলক্ষিত হয়। এ চিন্তাধারা সেসব লোকের মাঝে পরিলক্ষিত হয়, যারা ছিল আল্লাহর ক্রোধের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত । সুতরাং সুফিবাদে হকিকত ও তরিকতের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না।