তথ্যসংগ্রহে প্রশ্নমালার গুরুত্ব উল্লেখ কর।

অথবা, প্রশ্নমালার গুরুত্ব লিখ।
অথবা, প্রশ্নমালার প্রয়োজনীয়তাসমূহ তুলে ধর।
অথবা, প্রশ্নমালার তাৎপর্যসমূহ কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজের গবেষণার জন্য তথ্যসংগ্রহের কৌশল হিসেবে প্রশ্নপত্র ব্যবহার একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদ্ধতি । মার্কস যেখানে সমাজ গবেষণার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক এবং দার্শনিক পদ্ধতি ব্যবহার করেছিলেন এক পর্যায়ে তিনিও প্রশ্নমালা ব্যবহারে গুরুত্বারোপ করেছিলেন। এমনকি তিনি নিজে একটি প্রশ্নমালা তৈরি করে তা দিয়ে তথ্যসংগ্রহের প্রয়াসও নিয়েছিলেন ।
প্রশ্নমালার গুরুত্ব : প্রশ্নমালা হলো একটি লিখিত দলিল, যাতে অনেকগুলো প্রশ্ন বা বক্তব্য থাকে এবং প্রশ্নগুলো কোনো ব্যক্তি বা দলের নিকট হতে সংগ্রহ করার জন্য ব্যবহৃত হয় । এটা একটি গবেষণা পদ্ধতি যেখানে পূর্ব নির্ধারিত প্রশ্ন উত্তরদাতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। প্রশ্নমালা দু’ভাবে ব্যবহার করা যায়। যথা :
ক. গবেষক উত্তরদাতার নিকট প্রশ্নমালা বিতরণ করবেন এবং উত্তরদাতা নিজে উত্তরগুলো লিখে দিবেন এবং
খ. গবেষক প্রশ্নমালা পড়ে শুনাবেন এবং উত্তরদাতা মুখে উত্তরগুলো বলবেন এবং গবেষক সেগুলো নিজে লিখে নিবেন । প্রশ্নমালা পদ্ধতিতে একই প্রশ্ন সকল উত্তরদাতাকে জিজ্ঞাসা করা হয় এবং প্রশ্নগুলো পূর্বেই লিপিবদ্ধ করা থাকে ।
উত্তরে ‘ছক’ও পূর্বেই ঠিক করে দেয়া হয়। উত্তরগুলো ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ অথবা পয়েন্ট স্কেল অনুসারে হয়। অনেক প্রশ্ন আবার উন্মুক্ত থাকে, যার উত্তর উত্তরদাতা নিজেই দিয়ে থাকেন । প্রশ্নমালা দুটি কারণে গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ। এর একটি হলো বর্ণনা করা এবং অন্যটি হলো পরিমাপ করা ।
ক. বর্ণনা : প্রশ্নমালার সাহায্যে যে তথ্য পাওয়া যায় তা কোন ব্যক্তি বা দলের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করে থাকে । যেমন- তাদের বয়স, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশা, আয়, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পছন্দ অপছন্দ ইত্যাদি। এ ধরনের বর্ণনা গবেষককে নানাভাবে সাহায্য করে থাকে । উদাহরণস্বরূপ, কোন দম্পতির শিক্ষাগত যোগ্যতা তাদের পরিবার পরিকল্পনার প্রতি মনোভাব ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করতে পারে। অতএব, দেখা যায় যে, নমুনার সঠিক বর্ণনা গবেষককে সাহায্য
করে থাকে ।
খ. পরিমাপ : প্রশ্মালার প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো পরিমাপন । এর সাহায্যে ব্যক্তিগত বা দলগত চল পরিমাপ করা হয় । যেমন- এর সাহায্যে ব্যক্তি বা দলের মনোভাব পরিমাপ করা হয়। প্রশ্নমালা বিভিন্ন দফার প্রশ্ন দ্বারা গঠিত হয় এবং তা ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মনোভাব পরিমাপ করার কাজে ব্যবহার করা হয়। সামাজিক দূরত্ব, গোষ্ঠীর সংহতি, বর্ণসংস্কার, ধর্মবিশ্বাস, উদ্বেগ ইত্যাদি বিষয়ের উপর ব্যক্তি বা দলের মনোভাব পরিমাপ করার কাজে প্রশ্নমালা পদ্ধতি বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, গবেষণার জন্য প্রশ্নমালার মাধ্যমে তথ্যসংগ্রহ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি । অর্থাৎ তথ্যসংগ্রহে প্রশ্নমালার গুরুত্ব অনেক । মূলত সামাজিক গবেষণার তত্ত্বগত মানের উন্নয়নের পাশাপাশি সামগ্রিকভাবে সামাজিক কল্যাণে প্রশ্নপত্র পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।