তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলাে লিখ

প্রশ্না২৭৷ তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ।
অথবা, তত্ত্বের প্রকৃতি লিখ।
অথব, তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো তুলে ধর।

উত্তর৷ ভূমিকা : বর্তমানে একটি বহুল প্রচলিত শব্দ তত্ত্ব । তত্ত্ব বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তথা গবেষণার একটি মৌলিক উপাদান । তত্ত্ব সামাজিক গবেষণার ক্ষেত্রকে ত্বরান্বিত করে থাকে। সমাজে যে সব ঘটনা ঘটে তার প্রত্যেকটি এক বা একাধিক তত্ত্বের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠে।


‘তত্ত্বের বৈশিষ্ট্যসমূহ : সমাজ গবেষকগণ তত্ত্বের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনকে আলোচনা করেছেন । এছাড়া তত্ত্বের সংজ্ঞার দিকে দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, এর কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে এগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :
১. তত্ত্ব বাস্তবতাকে ব্যাখ্যার মানবীয় ক্ষমতা : তত্ত্ব একটি মানসিক কর্মকাণ্ড, করুণার জগৎ ও যুক্তি আশ্রয়ী মনের সৃজনশীল সংগঠন ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ। এটি বাস্তবতাকে ব্যাখ্যা করার মানবীয় ক্ষমতা, যা শব্দ সম্পর্ক, যুক্তি, আঙ্গিক পারম্পর্য, সিদ্ধান্ত প্রভৃতির মাধ্যমে সুশৃঙ্খলভাবে উপস্থাপিত ।

২. তত্ত্বে ঘটনা নির্বিশেষে রূপকে পাওয়া যায় : তত্ত্বের মধ্যে ঘটনা বা আচরণ বা ক্রিয়ার নির্বিশেষ রূপকে পাওয়া যায়। যেমন- বঞ্চনা ও হতাশা থেকে বিদ্রোহের সূত্রপাত হতে পারে। তত্ত্ব যত বেশি বিমূর্ত প্রত্যয় ধারণা করে, তত বেশি বিমূর্ত তত্ত্বের রূপ নেয়।

৩. তত্ত্ব সামাজিক বাস্তবতার ধারণা দেয়: তত্ত্ব সামাজিক বাস্তবতার একটি বিশেষ অংশ বা দিক সম্পর্কে ধারণা দেয় । সমাজ নির্বিশেষে ব্যাপক প্রকৃতির তত্ত্বের অস্তিত্ব যে নেই তা নয়, তবে এ ধরনের তত্ত্বের পুনর্বিচার বা প্রয়োগ বড় কঠিন।


৪. তত্ত্ব চিরস্থায়ী নয় : অনুসিদ্ধান্তের মতো তত্ত্বও অস্থায়ী। পরম সত্যকে তুলে ধরার জন্য তত্ত্ব প্রদান করা হয় না। তত্ত্ব সংশোধিত হতে পারে। আমাদের জ্ঞানের উৎকর্যের মাত্রা নির্দেশক হিসেবে তত্ত্বের মূল্যায়ন হওয়া উচিত । অর্থাৎ, আমাদের তত্ত্বের গুণাগুণ নির্দেশ করবে আমরা কতটা অগ্রসর চিন্তার অধিকারী ।

৫. তত্ত্ব বিজ্ঞানের অবয়ব গঠনে সহায়তা করে: ঘটনা হলো অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যাচাইযোগ্য পর্যবেক্ষণ । ঘটনা পর্যবেক্ষণসমূহের উপর ভিত্তি করে গঠিত। ঘটনা ও তত্ত্বের সমন্বয়েই বিজ্ঞানের অবয়ব গঠিত হয়।

৬. তত্ত্ব গবেষণাকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে : তত্ত্ব যেমন গবেষণাকে দিক নির্দেশনা দিয়ে থাকে, তেমন গবেষণারও উত্তম লক্ষ্য হওয়া উচিত তত্ত্বনির্মাণ।


৭. ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা : তাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্তের স্বাধীন ও বাস্তব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ বিদ্যমান ।


উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, তত্ত্ব বিচিত্র বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। গবেষণার চূড়ান্ত পরিণতি হলো তত্ত্ব। যে কোনো গবেষণার সফলতা নির্ভর করে তত্ত্বের উপর। আবার সফল গবেষণা থেকে গড়ে উঠে ভালো তত্ত্ব ।