তত্ত্বাবধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বর্ণনা কর ।

অথবা, তত্ত্বাবধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ লিখ।
অথবা, তত্ত্বাবধানের উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, মাঠকর্মে তত্ত্বাবধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ আলোচনা কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
তত্ত্বাবধানের মূল লক্ষ্য হলো প্রতিষ্ঠান ও কর্মীর মান উন্নয়ন করা। এ প্রসঙ্গে Margaret William বলেছেন, “The ultimate objective of supervision is that throught more effective effort on the part of its workers, an agency’s services are improved in quality and its central purposes come nearer to fulfillment.” অর্থাৎ, তত্ত্বাবধানের প্রধান লক্ষ্য হলো কর্মীদের অধিক কার্যকর প্রচেষ্টার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানের সেবাসমূহ গুণগত দিক থেকে উন্নত করা এবং প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় উদ্দেশ্য পরিপূর্ণতার নিকটবর্তী হওয়া।মাঠকর্মে একে গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
তত্ত্বাবধানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য
ডি. পাল. চৌধুরী এবং হুসাইন ও আলাউদ্দীন তত্ত্বাবধানের যেসব উদ্দেশ্য নির্দিষ্ট করেন সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. সমাজকর্মের পদ্ধতির প্রয়োগ : তত্ত্বাবধানের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজকর্মের মূল্যবোধ, নীতিমালা ও পদ্ধতির যথাযথ প্রয়োগের প্রতি সচেতন থাকা।
২. প্রশিক্ষিত করে তোলা : কর্মীদের প্রশিক্ষিত করে তোলা এবং তাদের জ্ঞান ও দক্ষতা উন্নয়নে সাহায্য করা তত্ত্বাবধানের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।
৩. সহায়তা করা : চলমান কাজ সম্পর্কে সাম্প্রতিক জ্ঞান রাখতে প্রশাসককে সহায়তা করা তত্ত্বাবধানের একটি অন্যতম উদ্দেশ্য।
৪. খুঁজে বের করা : কর্মীদের কার্যপ্রণালি সূক্ষ্ম দৃষ্টিভঙ্গিতে উন্নত করার জন্য উদ্যম যোগানের মাধ্যমে গৃহীত কর্মপরিকল্পনার বিদ্যমান ফাঁক ফোকর এবং দুর্বলতা খুঁজে বের করা।
৫. সহযোগিতা করা : নতুন ধারণা, নীতি ও পরিকল্পনাগুলোকে উন্নত করে তুলতে বা তত্ত্বাবধায়ককে সহযোগিতা করা, যা এজেন্সির কার্যক্রমকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য শক্তি যোগাবে।
৬. ক্ষোভ প্রশমন : প্রতিষ্ঠানের কর্মরত কর্মীদের ক্ষোভ প্রশমন করা তত্ত্বাবধানের আর একটি উদ্দেশ্য।
৭. মান নির্ধারণ এবং উন্নয়ন : প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কাজের মান নির্ধারণ এবং উন্নয়ন তত্ত্বাবধানের আরেকটি উদ্দেশ্য।
৮. পৌছে দেয়া : প্রশাসনিক অনুপ্রেরণা, আদর্শ, ধ্যানধারণা, মতামত, বন উদ্ভাবিত পন্থা প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের সকলের
মধ্যে পৌছে দেয়া।
৯. স্পৃহা উন্নত করা : কার্য সম্পর্ক ও নিয়মাদি মেনে চলার সম্প্রীতি সৃষ্টি করা এবং কর্মীদের মধ্যে দলগতভাবে কাজ করার স্পৃহা উন্নত করা।
১০. শৃঙ্খলাবোধ সৃষ্টি : কর্মীদের মধ্যে সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করার মানসিকতা সৃষ্টি করা এবং এর মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা।
১১. সর্বোচ্চ প্রাপ্তি : ব্যক্তিগত সামর্থ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের কাজ থেকে সর্বোচ্চ কাজ প্রাপ্তি।
১২. মূল্য নিরূপণ : প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের সামর্থ্য ও দুর্বলতাসমূহ মূল্যায়ন করা এবং তাদের সম্পাদিত কার্যাদির মূল্য নিরূপণ করা।
১৩. নীতি ও নিয়মকানুন : প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন নীতি ও নিময়কানুন অনুসারে সেবাকর্ম পরিচালিত হচ্ছে কি না তা দেখা এবং প্রতিষ্ঠানের উন্নতিকল্পে প্রয়োজনীয় ও যুগোপযোগী পরামর্শ দেয়া তত্ত্বাবধানের অন্যতম উদ্দেশ্য।
১৪. শিক্ষা দান : প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দায়িত্ব পালনের পদ্ধতি ও কৌশল সম্পর্কে কর্মীদের শিক্ষা দান করা, যাতে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনে তারা সক্ষম হয়ে গড়ে উঠতে পারে এবং ভবিষ্যতে তদারকির দায়িত্ব নিতে পারে।
১৫. আন্ত:সম্পর্ক : তত্ত্বাবধানের অপর একটি উদ্দেশ্য হলো দলগত কাজের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখা।এর দ্বারা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমগুলো সমাধা কর া সহজ হয়।
১৬. সর্বোত্তম লাভ : কর্মীদের থেকে সর্বোত্তম লাভ নিশ্চিত করা তত্ত্বাবধানের একটি উদ্দেশ্য ।
১৭. কর্মে জটিলতা : কর্মে জটিলতা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় কর্মীদের সহায়তা করা ।
১৮. ক্ষমতা : তত্ত্বাবধানের অপর একটি লক্ষ্য হলো, কর্মীর ক্ষমতা ও দুর্বলতা মূল্যায়ন করা ।
১৯. অসন্তোষ প্রশমন : প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে যাবতীয় ক্রোধ ও অসন্তোষ প্রশমন করা ।
২০. ভুলত্রুটি চিহ্নিত : কাজের ভুলত্রুটি চিহ্নিত করা এবং তা দূর করতে সাহায্য করা তত্ত্বাবধানের একটি উদ্দেশ্য।
উপসংহার : উপর্যুক্ত উদ্দেশ্য ছাড়াও এজেন্সির কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে নতুন নতুন কর্মকৌশল উদ্ভাবন করা এবং প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মধ্যে দায়িত্ব জ্ঞান বৃদ্ধি করা তত্ত্বাবধানের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a6%e0%a7%8d%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%b8%e0%a6%ae%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a6%95%e0%a6%b0%e0%a7%8d/