ডাক প্রশ্নমালা ও অনুসূচির মধ্যে পার্থক্য লিখ ।

অথবা, ডাক প্রশ্নমালা ও অনুসূচির মধ্যে বৈসাদৃশ্য উল্লেখ কর।
অথবা, ডাক প্রশ্নমালা ও অনুসূচির মধ্যে ৮টি পার্থক্য তুলে ধর।
উত্তর ভূমিকা :
ডাক প্রশ্নমালা এবং অনুসূচি উভয়ই সামাজিক জরিপ গবেষণায় প্রাথমিক উপাত্ত বা তথ্যসংগ্রহের অত্যন্ত জনপ্রিয় কৌশল । উভয়ই গবেষণার উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত কতিপয় পারস্পর্যপূর্ণ লিখিত প্রশ্নের সমন্বয়ে গঠিত। কাঠামোগত দিক থেকে ডাক প্রশ্নমালা এবং অনুসূচির মধ্যে কোন মৌলিক পার্থক্য না থাকলেও ব্যবহারগত দিক থেকে এ দুটির মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় ।
ডাক প্রশ্নমালা এবং অনুসূচির মধ্যে পার্থক্য : নিম্নে ডাক প্রশ্নমালা ও অনুসূচির মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো :
১. পদ্ধতিগত : পদ্ধতিগত দিক থেকে ডাক প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা উত্তরদাতার কাছে ডাকযোগে প্রেরণ করা হয় এবং উত্তরদাতা সেটি নিজে পূরণ করে গবেষকের নিকট ফেরত পাঠান। কিন্তু অনুসূচির ক্ষেত্রে প্রশ্নমালা সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণের সময় ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী উত্তরদাতার মৌখিক উত্তর অনুসূচিতে লিপিবদ্ধ করেন ।
২. গবেষণা এলাকা : ডাক প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে গবেষণা এলাকা অনেক ব্যাপক ও বিস্তৃত থাকে, পক্ষান্তরে অনুসূচির ক্ষেত্রে গবেষণা সীমিত এলাকা জুড়ে ব্যাপ্ত থাকে ।
৩. সময় ও ব্যয় : ডাকযোগে প্রশ্নমালা অপেক্ষাকৃত কম সময়ে, কম ব্যয়ে প্রয়োগ করা যায় । কিন্তু অনুসূচি অধিক ব্যয়বহুল এবং সময় সাপেক্ষ কৌশল ।
৪. প্রশ্নের ব্যাখ্যা : ডাক প্রশ্নমালা সাধারণত স্বব্যাখ্যামূলক (Self-explanation) প্রশ্ন থাকে এবং প্রশ্নগুলো বিস্তারিত আকারে থাকে । অন্যদিকে, অনুসূচির ক্ষেত্রে প্রশ্নগুলো কম ব্যাখ্যামূলক হয় এবং প্রশ্নগুলো সংক্ষিপ্তাকারে থাকে । .
৫. ঝামেলা : উত্তরদাতার নিকট দ্রুত ডাকযোগে ঠিকানা অনুযায়ী প্রশ্নমালা পাঠানো যায় বলে ডাক প্রশ্নমালায় ঝামেলা কম হয়। কিন্তু অনুসূচির ক্ষেত্রে উত্তরদাতাকে অনেক সময় পাওয়া যায় না বলে এটি অধিক বা বেশ ঝামেলাপূর্ণ এবং এর সাথে ব্যাপক পরিভ্রমণের প্রশ্ন জড়িত ।
৬. গোপন তথ্যাবলি : ডাক প্রশ্নমালার উত্তরদাতা গোপন তথ্যাবলি নির্দ্বিধায় প্রকাশ করে কিন্তু অনুসূচির ক্ষেত্রে গোপন ব্যক্তিগত তথ্যাবলি প্রকাশ করতে সংকোচ বোধ করে ।
৭. প্রশ্নের ধরন : ডাকযোগে প্রেরিত প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরন অত্যন্ত সহজ, সরল ও সাবলীল প্রকৃতির হয়। পক্ষান্তরে, অনুসূচির ক্ষেত্রে প্রশ্নের ধরন দুর্বোধ্য ও জটিল প্রকৃতির হয়।
৮. স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর : ডাক প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে উত্তরদাতার নিকট থেকে স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা কম। পক্ষান্তরে, অনুসূচির ক্ষেত্রে উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পান না বলে স্বতঃস্ফূর্ত উত্তর পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি ।
৯. পক্ষপাতদুষ্ট : ডাক প্রশ্নমালার ক্ষেত্রে প্রশ্নকারী (সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী) নিজে উত্তর প্রদানের সময় উপস্থিত থাকেন না বলে ডাক প্রশ্নমালা দ্বারা সংগৃহীত তথ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা কম হয়। পক্ষান্তরে, অনুসূচির ক্ষেত্রে সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর উপস্থিত হেতু উত্তরদাতা তথ্য প্রদানে পক্ষপাতের সুযোগ গ্রহণ করতে পারে। ফলে তথ্য অধিকতর পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।
১০. নমুনায়ন পদ্ধতির ব্যবহার : ডাক প্রশ্নমালায় নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় না কিন্তু অনুসূচির ক্ষেত্রে নমুনায়ন পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ডাক প্রশ্নমালা ও অনুসূচি উভয়েরই আকৃতি ও প্রকৃতি মূলত এক এবং উভয়ই বাস্তব ক্ষেত্র হতে প্রাথমিক তথ্যসংগ্রহের জন্য ব্যবহৃত হয়। বস্তুত ব্যবহারিক প্রয়োজনে অপে ক্ষাকৃত আলাদা ধাঁচে প্রশ্নমালা উত্তরদাতাদের কাছে দু’ভাবে উপস্থাপন করা হয় মাত্র। গবেষণার উদ্দেশ্য, গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য এবং বিশেষত উত্তরদাতাদের অবস্থান ও প্রকৃতি বিবেচনা করে সুবিধামতো ক্ষেত্রে ডাক প্রশ্নমালা এবং অনুসূচি প্রয়োগ করা হয় ।