জাতীয় জনসংখ্যা নীতির প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।

অথবা, জাতীয় জনসংখ্যা নীতির সামাজিক প্রেক্ষাপট আলোচনা কর।
অথবা, জাতীয় জনসংখ্যা নীতির সামাজিক পটভূমি আলোচনা করো।
অথবা, জাতীয় জনসংখ্যা নীতির ইতিহাস আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ ছোট দেশটিতে ১৪ কোটিরও বেশি লোক বসবাস করে। বাংলাদেশের এ বিশাল জনসংখ্যা এ দেশের প্রধান সামাজিক সমস্যা এবং পাশাপাশি আরও অসংখ্য সমস্যার জন্মদাতা। তাই স্বাধীনতা লাভের পর হতে এ দেশে যতগুলো পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে, তার প্রতিটিতে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের উপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করা হয়। পরিবার পরিকল্পনাকে তৃণমূল পর্যায়ে জনগণের কাছে
পৌছিয়ে দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়। এসব পদক্ষেপের ফলে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কিছু সাফল্যও অর্জিত হয়।
জনসংখ্যা নীতির পটভূমি : পৃথিবীর জনসংখ্যা নীতির প্রেক্ষাপট বা বৃদ্ধির ইতিহাস মোটামুটি পুরাতন। আর এ নীতি সম্পর্কে কিংসলে ডেভিস এর বক্তব্য বেশ প্রণিধানযোগ্য। ডেভিসের মতে, “দূর অতীত থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত যে বিশাল প্রেক্ষাপট, সে বিচারে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারকে তুলনা করা যেতে পারে এমন একটি সরু বারুদ লাগানো লম্বা সুতার সাথে যাতে অনেককাল আগেই অ-গুন ধরানো হয়েছে। বারুদের আগুন ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে লক্ষ্যের দিকে, কখনো দ্রুত কখনো বা থেমে থেমে। এমন একটা সময় আসবে যখন ঐ আগুন মূল বিস্ফোরককে পৌঁছে প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটাবে।” এ উদ্ধৃতি থেকে পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিও তার ভয়ানক পরিণতির একটা নিখুঁত ছবি ফুটে উঠে। ধরা পড়ে সুদূর অতীত ও বর্তমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের বিশাল পার্থক্য। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫৯ কোটি। ১৯৯৩ সালে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৫৪০ কোটি, ১৯৯০ সালে ৬০০ কোটি, ১৯৯৯ সালে ৬২০ কোটি এবং ২০১১ সালে ৭০০ কোটিতে উন্নীত হয়। শিল্পোন্নত দেশগুলোতে এ সময়ে জনসংখ্যা ৫১ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৪ কোটি অর্থাৎ ১৪৩% বৃদ্ধি পেয়েছে। ঐ একই সময়ে অনুন্নত দেশগুলোতে জনসংখ্যা ১০৮ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪৫৫ কোটি। অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ২৮৫%। সমগ্র পৃথিবীতে গড়ে এ সময়ে বৃদ্ধির হার ১৯৬%। বর্তমান বিশ্বে জনসংখ্যা বৃদ্ধি সকলের দুশ্চিন্তার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনতত্ত্বিকরা মোটামুটি নিশ্চিত যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে প্রাকৃতিক সম্পদেরই সংকট দেখা দিবে এবং বৈশ্বিকভাবে অর্থনৈতিক মন্দার সৃষ্টি হবে। তবে ব্যতিক্রম যে সেই তাও নয়। অনেক অগ্রগামী দেশ রয়েছে যাদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রয়োজন। সেসব দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সরকারি পর্যায়ে মাথাব্যাথার বিষয়। বিশেষকরে দেখা যায়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর উন্নত দেশসমূহে এ নিয়ে চিন্তাভাবনা হয়েছিল বেশি, আবার অনেক কমিউনিস্টরা এ বিষয়ে কোনো চিন্তা করেন না।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, জনসংখ্যা নীতির পটভূমি চমকপ্রদ হলেও বর্তমানে সকলের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা জনসংখ্যা বিষয়ে ত্রিমুখী চিন্তাভাবনাই আজকের জনসংখ্যা নীতি। বর্ধিত জন্মহার রোধ সংক্রান্ত কর্মসূচি, নিরপেক্ষ নীতি, উৎসাহ যোগান নির্দেশক কর্মসূচি ইত্যাদির সম্মিলিত নীতি নির্ধারণী প্রয়াসই জনসংখ্যা নীতি।