ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচিসমূহ বিস্তারিত উল্লেখ কর।

ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচিসমূহ বিস্তারিত উল্লেখ কর।
অথবা,
১১ দফা কর্মসূচির দফাসমূহ আলোচনা কর।
ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচিসমূহ সম্পর্কে যা জান লিখ।
অথবা, ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচির বিবরণ দাও।
অথবা,
উত্তর৷ ভূমিকা : আইয়ুব দশকের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মূল্যায়নে যখন পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ব্যতিব্যস্ত তখন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উক্ত দশকের শোষণনীতি ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে। ১৯৬৮ সালের শেষদিকে ছাত্রসমাজের এগারো দফা দাবি পেশ পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এ শোষণনীতিরই বহিঃপ্রকাশ।
১১ দফার ভিত্তিতেই তদানীন্তন পূর্ব বাংলা বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ক্ষমতাসীন স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ্য ও দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিল। ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচি : ছাত্রদের ১১ দফা কর্মসূচির বিষয়গুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
প্রাদেশিকীকরণকৃত (Provincialised) কলেজগুলোকে পুনরায় বেসরকারি কলেজে রূপান্তর করা।
স্কুল ও কলেজের সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
সরকারি কলেজগুলোতে নৈশ বিভাগ প্রবর্তন করা।
ছাত্র বেতন শতকরা ৫০ ভাগ হ্রাস করা।
ছাত্রদের আবাসিক খরচের ৫০ ভাগ সাহায্য প্রদান করা।
শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা।
পলিটেকনিক ছাত্রদের কনডেন্স কোর্সের সুযোগ প্রদান করা।
মেডিকেল ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা ও মেডিকেল কাউন্সিল আইন প্রত্যাহার করা। ১৯৬১ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিল করা ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা।
হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট বাতিল করা।
সার্বভৌম ক্ষমতাসম্পন্ন যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং একই ব্যবস্থায় দেশ রক্ষা, পররাষ্ট্র ও মুদ্রা সংক্রান্ত বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে রাখা। ছাত্রদের বিমানে, ট্রেনে ও বাসে ভাড়া হ্রাস করা।
চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা ও চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করা।
বাংলা ভাষাকে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে প্রবর্তন করা।
সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। প্রত্যেক প্রদেশের আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম
সীমান্ত প্রদেশকে নিয়ে সাব-ফেডারেশন গঠন করার ব্যবস্থা করা।
ব্যাংক, বিমা ও বৃহৎ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জাতীয়করণ করা।
কৃষকের উপর থেকে খাজনার বোঝা হ্রাস করা।
বকেয়া খাজনা ও ঋণ মওকুফ করা।
পাট ও আখের ন্যায্যমূল্য প্রদান করা।
শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি ও বোনাস প্রদান করা।
শিক্ষা, চিকিৎসা ও বাসস্থানের সুবিধা প্রদান করা।
শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী সকল প্রকার কালাকানুন বাতিল করা।
ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার প্রদান করা।
৮. পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং জল সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের ব্যবস্থা করা।
সকল প্রকার নিরাপত্তামূলক আইন ও নির্যাতনমূলক আইন প্রত্যাহার করা।
১০. সিয়াটো (SEATO), সেন্টো (CENTO) এবং পাকিস্তান মার্কিন সামরিক চুক্তি বাতিল করা এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি প্রবর্তন করা।
১১. তথাকথিত আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামিসহ দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক সকল রাজবন্দীর মুক্তিদান করা এবং সকল গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি মাসে ১১ দফা কর্মসূচি গ্রহণ করে। ১১ দফার মধ্যে ৬ দফা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ১১ দফা কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় অর্ডিন্যান্স বাতিলসহ শিক্ষার সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন, প্রাপ্ত বয়স্কদের ভোটাধিকারসহ বাকস্বাধীনতা, বৃহৎ শিল্প জাতীযকরণ, কৃষক শ্রমিকের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি, নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতি, জরুরি নিরাপত্তা আইন প্রত্যাহার ও রজবন্দীদের মুক্তি প্রভৃতি দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল।