চাকমা সমাজে অর্থনীতি সম্পর্কে আলোচনা কর।

অথবা, চাকমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, চাকমা সমাজের অর্থনীতি কিসের উপর নির্ভরশীল আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা :
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অঞ্চল এখন তিনটি জেলায় বিভক্ত, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবান। বাংলাদেশের এই তিনটি জেলাতেই চাকমারা বসবাস করে। তবে এ তিনটির মধ্যে রাঙামাটি জেলায়ই সবচেয়ে বেশি চাকমার বাস, এরপরই খাগড়াছড়ির স্থান। বান্দরবান জেলায় সামান্য সংখ্যক চাকমা বসবাস করে।
চাকমা অর্থনীতি : চাকমা অর্থনীতি সম্পর্কে নিয়ে আলোচনা করা হলো :
ক. জুম চাষ : ঐতিহ্যগতভাবে চাকমারা পর্যায়ক্রমে চাষ বা জুম চাষের উপর নির্ভরশীল। পাহাড়ের গাছপালা কেটে, শুকিয়ে ও পুড়িয়ে নিয়ে সেখানে ধান, তিল ও অন্যান্য ফসলের মিশ্রিত বীজ একত্রে বপন করে পরবর্তীতে যখন পাকে সেটা ঘরে তোলার কৃষি পদ্ধতির নামই জুম চাষ।
চাকমা সমাজে এখন জমি ব্যক্তিমালিকানায় বরাদ্দ দেয়া চলছে। জুম চাষকে সরকার বরাবরই নিরুৎসাহিত করে আসছে। তবে জুমচাষ এখনো যে নেই তা নয়। চাকমা সমাজে পাহাড়ি জুম জমিতে এখনো পুরোপুরি ব্যক্তিমালিকানা নেই। ফলে যেখানে যার পছন্দ সে অনুযায়ী জুম চাষ করছে।
খ. হালকৃষি : হালকৃষি জমির অধিকাংশই ব্যক্তিমালিকানায়। চাকমা উত্তরাধিকার প্রথা বাঙালি হিন্দুসমজের উত্তরাধিকার প্রথার প্রায় অনুরূপ। অর্থাৎ সাধারণত চাকমার পুত্র সন্তানেরাই জমির উত্তরাধিকারী কন্যারা নয়। ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই চাকমারা বাঙালিদের থেকে হালচাষ পদ্ধতি শিখেছে। দুই পাহাড়ের মাঝখানে সমতল ভূমিতে চাকমারা ধান চাষ করে। এছাড়া রাবার চাষ, কাঠের গাছ ও ফল-ফলাদির চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে।
গ. পশুপাখি পালন : চাকমা অর্থনীতির আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এই যে, অনেকেই মোরগ-মুরগি ও শূকর পালন করে। বন বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ কৌশলের মাধ্যমে চাকমারা নানা ধরনের শাক-পাতা-সবজি সংগ্রহ করে।
ঘ. কুটিরশিল্প : বাঁশ ও বেত দিয়ে কুটির শিল্পজাত দ্রব্য তৈরিতেও চাকমাদের বেশ সুনাম রয়েছে। এছাড়া চাকমারা নিজস্ব তাঁতে কাপড় বুনে। ব্যবসায়িক ভিত্তিতেও কেউ কেউ কাপড় বুনে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, চাকমা সমাজে সম্পত্তিতে ব্যক্তি মালিকানা প্রচলন, মুদ্রা অর্থনীতির ব্যাপক প্রসার, আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ ইত্যাদির ফলে সামাজিক বৈষম্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। চাকমা সামাজিক স্তরবিন্যাসে আরো শিক্ষাই প্রধান উপাদান হিসেবে স্বীকৃত।