অথবা, চাকমা সমাজের বিবাহ সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, ঢাকমাদের সম্পর্কে লিখ।
অথবা, চাকমাদের বিবাহ ও পরিবার ব্যবস্থা সম্পর্কে লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলার মোট আয়তন প্রায় ৫,৩০০ বর্গমাইল। এ বিস্তৃত এলাকায় বসবাসরত উপজাতির সংখ্যা অনেক। এদের মধ্যে চাকমা উপজাতি প্রধান। এখানে প্রায় ৩৯ হাজার চাকমা পরিবার বসবাস করে।
চাকমা পরিবার : চাকমা পরিবার পিতৃতান্ত্রিক। অর্থাৎ চাকমা পরিবারে ক্ষমতা স্বামীর হাতে অথবা বয়স্ক পুরুষের হাতে ন্যস্ত । চাকমা পরিবার পিতৃসূত্রীয়। অর্থাৎ সম্পত্তি বা বংশ পরিচয় পিতা থেকে পুত্রে বর্তায়। চাকমারা সাধারণত এক বিবাহভিত্তিক অণুপরিবারেই বসবাস করে। যৌথ পরিবার বা বর্ধিত পরিবারের উদাহরণ খুবই বিরল।
চাকমা বিবাহ : চাকমাদের মধ্যে নিজ বংশের সাত পুরুষের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। কার্যত চাকমারা এই রীতি পুরোপুরি মেনে চলে যা চাকমা সমাজে ক্রস কাজিন বিবাহ প্রচলিত আছে। তাদের মধ্যে প্যারালাল কাজিন বিবাহও সীমিত অর্থে প্রচলিত। চাকমা সমাজে বহুস্ত্রী বিবাহ অনুমোদিত। চাকমা সামজে বিধবা বিবাহও অনুমোদিত। চাকমা সমাজে অন্তর্বিবাহ এবং বহির্বিবাহ উভয়ই প্রচলিত। সাধারণত একজন চাকমা যুবক চাকমা সমাজেই বিয়ে করে। তবে সে অন্য গোষ্ঠীতেও বিয়ে করতে পারে। তবে সাধারণত একজন চাকমা মেয়ের বিবাহ চাকমা গোষ্ঠীতেই হয়ে থাকে। চাকমা বিয়েতে সাধারণত বর কন্যার বাড়িতে যায় না। বর পক্ষের লোকজন গিয়ে কন্যা তুলে নিয়ে বরের বাড়িতে ফিরে আসে এবং বরের বাড়িতেই বিয়ের সামাজিক অনুষ্ঠানাদি পালিত হয়। চাকমা বিয়েতে বর পক্ষ কন্যাকে পোশাক-পরিচ্ছদ ও অলংকার দিয়ে থাকে। কন্যার বাবা-মার জন্য সামান্য উপহার সামগ্রীও নিয়ে থাকে। চাকমা বরেরা ঐতিহ্যগতভাবে কোনো যৌতুক পায় না। চাকমা বিবাহিত দম্পতি বিয়ের পর স্বামীর পিতার গৃহে অথবা স্বামীর নিজ গৃহে বসবাস করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, চাকমা পরিবার পিতৃতান্ত্রিক বলে বিবাহ এবং পরিবার কাঠামোতে পুরুষের প্রাধান্য বেশি।