উত্তর : ভূমিকা ঃ চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময়কালের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। যেগুলোর মূল প্রাতিপাদ্য বিষয় ছিল দারিদ্র্য বিমোচন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন আবার এসব প্রকল্পের মধ্যে চারটি ছিল দারিদ্র্য বিমোচনে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিক নিবিড় উন্নয়ন কর্মসূচি। এছাড়া এ পরিকল্পনায় চলতি কর্মসূচির সাথে নতুন আরও কিছু কর্মসূচি সংযোজন করা হয়।
→ চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় গৃহীত সমাজকল্যাণ কর্মসূচিগুলো নিম্নরূপ যথা ঃ
১. পল্লি ও শহর সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ শহরের বস্তি ও অনুন্নত এলাকাসমূহে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলোর সম্প্রসারণ উন্নয়ন সাধন করা। গ্রামের শিশু ও বয়স্ক মহিলাদের সংগঠিত করে সমন্বিত উপায়ে উৎপাদন, আয় কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা ইত্যাদির ব্যবস্থাকরণ।
২. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কার্যক্রম ঃ দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য চলমান যেসব প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম রয়েছে তা জাতীয় কমপ্লেক্সের কার্যক্রমের আলোকে উন্নত করতে হবে। যার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন, বৃদ্ধিমূলক শিক্ষা ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
৩. শিশুকল্যাণ কার্যক্রম ঃ এতিম, অবহেলিত ও আশ্রয়হীন শিশুর পরিচর্যা, নিরাপত্তা, বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা, অবহেলিত শিশুদের পরিবার কেন্দ্রিক সেবার ব্যবস্থা করা। এ উদ্দেশ্যে ৫৬টি শিশু সদনকে শিশু
পরিবারে রূপান্তরিত করা।
৪. যুব ও কিশোর অপরাধ সংশোধন কার্যক্রম ঃ যুব ৬ কিশোর অপরাধীদের সংশোধন ও পুনবার্সনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং এ জন্য তিনটি বিভাগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেন।
৫. বয়স্ক ও অক্ষমসেবা কর্মসূচি ঃ জনগণের একটি বিরাট ও গুরুত্বপূর্ণ অংশ বয়স্ক শ্রেণি। বর্তমান বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে বয়স্ক সমস্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, বয়স্ক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বয়স্কদের চিকিৎসা সামাজিক সেবা ও বিনোদনমূলক ব্যবস্থা করার নিমিত্তে তিনটি বিভাগে তিনটি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
৬. মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন কর্মসূচি ঃ মাদকাসক্ত সমস্যা বর্তমানে দেশে একটি মারাত্মক রূপধারণ করেছে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মাদকাসক্তদের পরামর্শদান, উপদেশ, নির্দেশনা চিকিৎসাসেবা প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে এ দায়িত্ব পালন করে।
৭. ভিক্ষুক, ভবঘুরে ও দুস্থ কল্যাণ কর্মসূচি ঃ এই কর্মসূচির আওতায় ভিক্ষা প্রদানে জনগণকে নিরুৎসাহিত করা। অক্ষম ভিক্ষুকদের দায়িত্ব গ্রহণে জনগণকে উৎসাহিত করা ও চলমান ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর উন্নতি সাধনের ব্যবস্থা নেয়া হয়।
→ কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিম্নরূপ ঃ দরিদ্র জনগণের কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে উৎপাদন
কর্মকাণ্ডে তাদের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করা।
দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মদক্ষতা ও ক্ষমতার বিকাশ সাধন করে গ্রাম উন্নয়নে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা সমাজের অসহায় শ্রেণির সাহায্যে সকলকে এগিয়ে আসতে উদ্বুদ্ধ করা। প্রতিবন্ধীদের জন্য শিক্ষা কর্মসূচি চালু করা। পরিবার কেন্দ্রিক কর্মসূচি গ্রহণ করে শারীরিক প্রতিবন্ধী ও বয়স্কদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা। নিবন্ধীকৃত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মোট ব্যয় বরাদ্দ ছিল ৬৭,২৩০ কোটি টাকা। যা পরে সংশোধিত হয়ে ৬২,০০০ কোটিতে দাঁড়ায়, এর মধ্যে সমাজকল্যাণ খাতে ব্যয় ধরা হয় ১৩৩ কোটি টাকা যার মধ্যে চলতি কর্মসূচির
জন্য ৫৩.৭২ কোটি টাকা ধার্য করা হয়।