উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ স্বাধীনতার পূর্বে ব্যাপক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নিয়ে সমাজকল্যাণ পরিকল্পনার যাত্রা শুরু হলেও সেগুলো
ছিল অসমাপ্ত এবং অসংগঠিত। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা সংগঠিত উপায়ে সমাজকল্যাণ পরিকল্পনা গৃহীত হয়।
→ চতুর্থ ও পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার কর্মসূচিসমূহ ঃ চতুর্থ পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা কর্মসূচিগুলো নিম্নে আলোচনা
করা হলো :
১. পল্লি ও শহর সমষ্টি উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ শহরের বস্তি ও অনুন্নত এলাকা সমূহে জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়ন, কর্মদক্ষতা ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলোর সম্প্রসারণ উন্নয়ন সাধন করা। গ্রামের শিশু ও বয়স্ক মহিলাদের সংগঠিত করে সমন্বিত উপায়ে উৎপাদন, আয় কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি ও শিক্ষা ইত্যাদির ব্যবস্থাকরণ।
২. শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী কার্যক্রম ঃ দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য চলমান যেসব প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম রয়েছে। তা জাতীয় কমপ্লেক্সের কার্যক্রমের আলোকে উন্নত করতে হবে। যার মাধ্যমে দক্ষতা উন্নয়ন বৃদ্ধিমূলক শিক্ষক ও পুনবাসন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।
৩. শিশুকল্যাণ কার্যক্রম ঃ এতিম, অবহেলিত ও আশ্রয়হীন শিশুর পরিচর্যা, নিরাপত্তা বাসস্থান ও শিক্ষার ব্যবস্থা করা, অবহেলিত শিশুদের পরিবারকেন্দ্রিক সেবার ব্যবস্থা করা। এ উদ্দেশ্যে ৫৬টি শিশু সদনকে শিশু পরিবারে রূপান্ত রিত করা।
৪. যুব ও কিশোর অপরাধ সংশোধনমূলক কার্যক্রম ঃ যুব ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন ও পুনর্বাসনের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং এ জন্য তিনটি বিভাগে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যবস্থা করেন।
৫. বয়স্ক ও সমাজসেবা কর্মসূচি ঃ জনগণের একটি বিরাট ও গুরুত্বপুর্ণ অংশ বয়স্ক শ্রেণি। বর্তমান বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে বয়স্ক সমস্যা। বয়স্ক সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে বয়স্কদের চিকিৎসা সামাজিক সেবা ও
বিনোদনমূলক ব্যবস্থা করার নিমিত্তে তিনটি বিভাগে তিনটি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ।
৬. মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন কর্মসূচি : মাদকাসক্ত সমস্যা বর্তমানে দেশে একটি মারাত্মক রূপধারণ করেছে। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় মাদকাসক্তদের পরামর্শদান, উপদেশ নির্দেশনা, চিকিৎসা সেবা প্রদান প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় । সমাজকল্যাণ ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করে।
৭. ভিক্ষুক, ভবঘুরে ও দুঃস্থ কল্যাণ কর্মসূচি ঃ এই কর্মসূচির আওতায় ভিক্ষা প্রদানে জনগণকে নিরুৎসাহিত করা। অক্ষম ভিক্ষুকদের দায়িত্ব গ্রহণে জনগণকে উৎসাহিত করা ও চলমান ভবঘুরে কেন্দ্রগুলোর উন্নতি সাধনের ব্যবস্থা করা
তাছাড়া দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ‘ব্যবস্থা করা হয়।
→ পঞ্চম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সমাজকল্যাণ কর্মসূচিসমূহ নিম্নরূপ ঃ
১. শহর ও গ্রামীণ সমষ্টি উন্নয়ন’ঃ শহর ও গ্রামীণ সমষ্টিতে নারী পুরুষ যাতে অবাধে কাজ করতে পারে, তার ব্যবস্থা করা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নত করা, শিশু যুবক, মহিলা ও প্রবীণদের দক্ষতা উন্নয়ন আয়বর্ধক কর্মসূচি,
স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপদ পানির ব্যবস্থা ইত্যাদি কর্মসূচিগুলো গ্রামীণ ও শহর সমষ্টিতে গ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়।
২. এতিম ও দুঃস্থ শিশুদের উন্নয়ন কর্মসূচি ঃ এতিম, দুঃস্থ অসহায়, পরিত্যক্ত ও আশ্রয়হীন শিশুদের সেবাযত্ন রক্ষণাবেক্ষণ, ভরণ-পোষণ, আশ্রয় ও শিক্ষা প্রভৃতির জন্য পারিবারিক পরিবেশ সৃষ্টি করা। এ জন্য সকল শিশু সদনকে শিশু পরিবারে রূপান্তর করার সুযোগ সৃষ্টি করা।
৩. প্রতিবন্ধী কার্যক্রম ঃ দৈহিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের কল্যাণে জাতীয় কমপ্লেক্স স্থাপিত হয় এবং গ্রামীণ সমাজসেবা কর্মসূচি সম্প্রসারিত হয়।
৪. দুঃস্থ ভবঘুরে ও ভিক্ষুক কল্যাণ ঃ অ
ক্ষম ভিক্ষুকদের দায়িত্ব গ্রহণ ও সক্ষমদের প্রশিক্ষণ এবং ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় ।
৫. সংশোধন কার্যক্রম ঃ শিশু ও কিশোর অপরাধীদের সংশোধন, চিকিৎসা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসনে ৬টি বিভাগীয় শহরে সংশোধন প্রতিষ্ঠান স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
৬. প্রবীণ সেবা কর্মসূচি ঃ প্রবীণ ও অক্ষমদের সেবাদানের লক্ষ্যে চিকিৎসা, চিত্তবিনোদন ভাতা, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক
কার্যক্রম বৃদ্ধির জন্য কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় এবং দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় ।
৭. হাসপাতাল সমাজসেবা কর্মসূচি ঃ সুস্থ সবল জাতি গঠন ও চিকিৎসাকে ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে এ কর্মসূচি গৃহীত হয়। স্বাস্থ্য ও সমাজসেবা কার্যক্রমের আওতায় সকল সরকারি হাসপাতালে সমাজসেবা কর্মসূচি চালু করা হয়। হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নতকরণে, পর্যাপ্ত আর্থিক বরাদ্দ নিশ্চিত করা হয় এই কর্মসূচিতে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে এ যাবৎকালে গৃহীত বিভিন্ন পরিকল্পনাসমূহ
প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, মূল্যায়ন তথা সার্বিক অবস্থা বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, যদিও এ সকল পরিকল্পনা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে, তথাপি উন্নয়নের গতিধারাকে এটি অনেকাংশে ত্বরান্বিত করতে সক্ষম হয়েছে।