গ্ৰাম সমাজের অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।

অথবা, গ্রাম সমাজের অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, গ্রাম সমাজের অর্থনৈতিক পরিবর্তন উল্লেখ কর।
অথবা, গ্রাম সমাজের অর্থনৈতিক পরিবর্তন সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
সমাজ পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনশীলতার হার, সময় ও সমাজভেদে ভিন্নতর হতে পারে। অর্থাৎ, কোনো সমাজই স্থবির নয়। মানুষের ক্রিয়াকর্ম, ব্যক্তিগত জীবনধারা ও আচরণ পদ্ধতি প্রভৃতি কারণে সমাজ অনিবার্যভাবে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে । অনুরূপভাবে বাংলাদেশের বৃহত্তর গ্রামীণ সমাজে রদবদল বা পরিবর্তন বিশেষভাবে লক্ষণীয়। সমাজের এ আবশ্যিক পরিবর্তনে মানুষ ক্রমশ উন্নততর পর্যায় বা সভ্য অবস্থায় উপনীত হয়েছে। পাশাপাশি মানুষ তার নিজস্ব সমাজ সংস্কৃতির অনেকটাই পরিবর্তনের ধাক্কায় হারিয়ে ফেলছে।
অর্থনৈতিক পরিবর্তন (Change in rural economy) : স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে যদিও সুসংবদ্ধভাবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণীত হয় নি, কিংবা প্রণীত হলেও বাস্তবায়িত হয় নি, তবুও বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উৎপাদন বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থিক ক্ষেত্রে বিরাট প্রভাব ফেলছে। অর্থনৈতিক অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠানের কাঠামো ও কার্যাবলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. ভূমি সম্পর্ক (Land relation) : বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর পরিবার প্রতি কৃষি জমির পরিমাণ প্রথমে ১০০ বিঘা এবং পরে ৭৫ বিঘারও কর্মে ৬০ বিঘায় সিলিং করা হয়েছে। বর্গাচাষিদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার কিছু বিধান জারি করেছে। যেমন- জমির মালিক আনুপাতিক হারে জমিতে বীজ সরবরাহ করলে উৎপাদিত ফসলের অর্ধেক পাবেন। বর্গাচাষি বীজ সরবরাহ করলে ফসলের দু’ তৃতীয়াংশ আর বর্গাদার এক তৃতীয়াংশ পাবেন।
২. অর্থনৈতিক পেশা (Occupation) : গ্রাম বাংলার গড়পড়তা আয় খানা প্রতি ৯২৭ ডলার থেকে ১,৩৪৮ ডলারে পৌঁছেছে। অর্থাৎ, ১৯৮৭-৮৮ থেকে ১৯৯৯-২০০০ নাগাদ বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ৩.২ শতাংশ। আয়ের প্রধান উৎসগুলো হচ্ছে ব্যবসায় ও বাণিজ্য, প্রেরিত অর্থ (remittance) এবং ধানবহির্ভূত কৃষি। (জনকণ্ঠ, ২২ জুলাই, ২০০২, পৃঃ ১৩)। গ্রাম এলাকায় দিনদিন বিচিত্র অকৃষি পেশার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আগের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে শ্রমবিভাগ এবং শ্রমের মূল্য ও মর্যাদা (Division of labour and Dignity of labour) বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩. জীবনযাত্রার মান (Standard of living) : গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষণীয়। কারণ বর্তমানে গ্রামে শিক্ষিতের হার বাড়ছে। শিক্ষিত যুবকেরা কর্মসংস্থানের পথ খুঁজে পেয়েছে। গ্রামীণ মেয়েরা শহরের বাসাবাড়ি এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ খুঁজে পেয়েছে। কৃষি মজুরের বেতনের পরিমাণ ও বৃদ্ধি পেয়েছে। আগের দিনে গ্রামীণ মানুষ মাটি ও কাসার তৈজসপত্র ব্যবহার করত। কিন্তু এখন ঐসবের স্থান দখল করেছে চিনা মাটির এবং কাঁচের তৈজসপত্র। শহরের সাথে তাল মিলিয়ে আধুনিক ডিজাইনের আসবাবপত্র এখন গ্রাম সমাজে ব্যবহার হতে দেখা যায় ।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিশেষে বলা যায় যে, কৃষি ব্যবস্থা চালু হওয়ার পরপরই গ্রামীণ সমাজব্যবস্থায় অর্থনৈতিক পরিবর্তন সূচিত হয়। সেই সাথে মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক গতিশীল হয়।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a6%ae/