অথবা, গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ ও ফলাফল ব্যাখ্যা কর।
অথবা, গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ ও প্রভাব উল্লেখ কর।
অথবা, গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ ও ফলাফল সবিস্তারে তুলে ধর।
উত্তর৷ ভূমিকা : শিল্পায়ন ও নগরায়ণ মানবজীবনে বিভিন্ন ধরনের সুখ ও সমৃদ্ধি আনয়ন করলেও পাশাপাশি ডেকে এনেছে কিছু পরিবেশগত বিপর্যয়, যা মানবসভ্যতাসহ সমগ্র প্রাণিকুলের অস্তিত্বকে হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছে। ‘গ্রিন হাউস ইফেক্ট’ এসব মারাত্মক পরিবেশগত বিপর্যয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। এর ফলে বাংলাদেশের সমগ্র উপকূলবর্তী অনেকগুলো দেশ আগামী ৩০-৫০ বছরের মধ্যে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ : গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার কারণ হিসেবে কিছু গ্যাসকে দায়ী করা হয়। এগুলোর মধ্যে কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2), মিথেন (CH4), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NO2), ওজোন (O3), ক্লোরোফ্লোরো কার্বন (CFCs) অন্যতম । CFC; সম্পূর্ণটাই মানবসৃষ্ট এবং অন্যান্য গ্যাসগুলো সাধারণত প্রকৃতিতে নানাভাবে তৈরি হয়।
প্রধান প্রধান গ্রিন হাউস গ্যাসের তুলনামূলক একটি তালিকা নিম্নে তুলে ধরা হলো :
গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার সম্ভাব্য প্রভাব : বিগত শত শত বছর ধরে মানুষের ভুলের কারণে, মানুষের কারণেই বায়ুমণ্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের ঘনত্ব বাড়ছে। ফলে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার তীব্রতাও বাড়ছে এবং পৃথিবীর
তাপমাত্রাও স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে মানুষের মনে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া নিয়ে যে আতঙ্ক বিরাজ করছে, তা এ অতিরিক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই হচ্ছে বলে মনে করা হয়। নিম্নে গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়া সম্ভাব্য প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. সমুদ্রে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি : বিজ্ঞানীরা বলেছেন, ভূ-মণ্ডলীয় উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মরুদেশের বরফ গলে এবং সমুদ্রের পানি প্রসারিত হয়ে পানির উষ্ণতা বৃদ্ধি পাবে, ফলে অনেক দেশই সমুদ্রের তলে তলিয়ে যাবে। এর ফলে বিশ্বব্যাপী সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশে এর প্রভাব হবে অত্যন্ত ব্যাপক। ২.০-২.৫
মিটার সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের ২৩০০০ বর্গকিলোমিটার ভূমি, কয়েকটি জেলা, ১৪% ফসলি জমি,
বনভূমির ২৪% সম্পূর্ণ পানির নিচে তলিয়ে যাবে।
২. ভূপৃষ্ঠের নিচু এলাকায় প্লাবন : পৃথিবীর উত্তাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে মেরু অঞ্চলের বরফ গলতে শুরু করবে। এর ফলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে। এতে সমুদ্রের অনেক দ্বীপ, উপকূলীয় অঞ্চল, সমুদ্রের উপকূলের দেশ (যেমন- মালদ্বীপ ও বাংলাদেশ) ও শহর পানিতে ডুবে যাবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চল বঙ্গোপসাগরে ডুবে যাবে। এর ফলে অনেক জীবন জীববসতি বিপন্ন হবে। উল্লেখ্য যে, ইতোমধ্যে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ সাগর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
৩. মরুভূমির বৈশিষ্ট্য : গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের তাপ বৃদ্ধি পেলে মাটিতে পানির পরিমাণ কমে যাবে। ফলে সমগ্র ভূমি মরুভূমিতে পরিণত হবে। আমাদের দেশের উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে মরুভূমির বৈশিষ্ট্য দেখা দিয়েছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে।
৪. বনাঞ্চল ধ্বংস : পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে উদ্ভিদের জীবনধারণের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হবে। এর ফলে বনাঞ্চল ধ্বংস হবে।
৫. এসিড বৃষ্টি : গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে আবহাওয়া মণ্ডলে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। এসব ক্ষতিকর অক্সাইডসমূহ বৃষ্টির পানির সাথে এসিড বৃষ্টি হিসেবে ভূপৃষ্ঠে পড়বে এবং ভূপৃষ্ঠের উর্বরতা আশংকাজনকভাবে হ্রাস পাবে এবং বনাঞ্চলে এসিড বৃষ্টি হলে বনাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা হতে দেখা যায়, গ্রিন হাউস প্রতিক্রিয়ার ফলে বাংলাদেশ ব্যাপক মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই এটা প্রতিরোধের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিবেশ আন্দোলন জোরদার করা প্রয়োজন। এর হাত থেকে আমরা রক্ষা না পেলে সমুদ্রের গহ্বরে আমাদের অস্তিত্ব চিরতরে হারিয়ে যাবে।