অথবা, গ্রাম সরকারের গঠন কাঠামো বর্ণনা কর।
অথবা, গ্রাম সরকারের গঠন কাঠামো সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
অথবা, গ্রাম সরকারের গঠন কাঠামো সম্পর্কে যা জান ও সংক্ষেপে আলোকপাত কর।
উত্তর৷ ভূনিকা : গ্রাম সরকার (Village Government) ব্যবস্থা বাংলাদেশের স্থানীয় শাসনের ক্ষেত্রে নতুন কোনো বিষয় নয়। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় সকলেই ভিন্ন ভিন্ন নামে এ ধরনের স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা গড়ে প্রয়াস চালিয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য প্রথম কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন জিয়াউর রহমান। তিনি গ্রামকে সকল প্রকার উন্নয়ন কাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার যে অব্যাহত প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন, তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমান জোট সরকার এ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।
গ্রাম সরকারের গঠন কাঠামো : ইউনিয়ন পরিষদের এক একটি ওয়ার্ডই হবে গ্রাম সরকার এলাকা। গ্রাম পরিষদে ১ জন চেয়ারম্যান, ১ জন উপদেষ্টা, ১০ জন পুরুষ সদস্য ও ৩ জন মহিলা সদস্য থাকবেন। ইউনিয়ন পরিষদের জন্য নির্বাচিত সদস্য তার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের চেয়ারম্যান বিবেচিত হবেন। ওয়ার্ডের জনগণের সাধারণ সভায় সদস্যগণ নির্বাচিত হবেন। পরিষদ গঠনের তারিখ থেকে গ্রাম পরিষদের মেয়াদ ৫ বছর হবে। এ আইনে প্রতিটি ইউনিয়নে ওয়ার্ডপ্রতি একটি করে গ্রাম সরকার গঠনের বিধান রয়েছে। সে হিসেবে দেশে গ্রাম সরকারের সংখ্যা ৪০,৩৯২টি। ২০০৩ সালের ২ আগস্ট থেকে সারাদেশে গ্রাম সরকার গঠন শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের নামের পর ওয়ার্ড নম্বরের সূচকে গ্রাম সরকারের নামকরণ হবে। এটি সংবিধানের ১৫২(১) অনুচ্ছেদে সংজ্ঞায়িত প্রশাসনিক একাংশ হিসেবে গণ্য হবে না, তবে ইউনিয়ন পরিষদের সহায়ক সংগঠন হবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের জন্য ইউপি সদস্য গ্রাম সরকারপ্রধান হবেন এবং ইউপি এর সংরক্ষিত আসনের মহিলা নির্বাচিত সদস্য সংশ্লিষ্ট গ্রাম সরকারের উপদেষ্টা হবেন। একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি, তিনজন মহিলা সদস্য (একজন মহিলা ভিডিপিসহ), একজন কৃষক সদস্য, দু’জন ভূমিহীন কৃষক, একজন ভিডিপি পুরুষ সদস্য, একজন সমবায় সমিতির সদস্য, একজন মুক্তিযোদ্ধা, একজন শিক্ষক, একজন ব্যবসায়ী, একজন চিকিৎসক বা পেশাজীবী প্রতিনিধি নিয়ে গ্রাম সরকার গঠিত হবে। অর্থাৎ, গ্রাম সরকারের মোট সদস্য সংখ্যা ১৫ জন। সমঝোতার মাধ্যমে গঠিত হয়েছে এ গ্রাম সরকার। এক বা একাধিক ক্ষেত্রের প্রতিনিধি পাওয়া না গেলে উক্ত স্থানে কৃষক প্রতিনিধি নেওয়া হবে। সরকারি পর্যায়ে UNO এর সিদ্ধান্তই এক্ষেত্রে চূড়ান্ত ।
গ্রাম সরকারের সভা : গ্রাম সরকারের দু’মাসে অন্তত একটি সভা এবং ছয় মাসে একবার সাধারণ সভা হবে। ঐ সভায় চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমের অগ্রগতি ও ভবিষ্যৎ উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হবে। সভার সিদ্ধান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাতে হবে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, গ্রাম সরকার স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। এর গঠন কাঠামো অত্যন্ত সুসামঞ্জস্য ও ভারসাম্যপূর্ণ। নির্দিষ্ট সময়ান্তে এর কার্যক্রম পরিচালিত হত। বর্তমানে এ ব্যবস্থা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হলেও এটি ছিল অন্যতম প্রশাসনিক ইউনিট।