গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের প্রধান কয়েকটি সমস্যার উল্লেখ কর।

অথবা, গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতাসমূহ উল্লেখ কর।
অথবা, গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অন্তরায় উল্লেখ কর।
অথবা, স্থানীয় রাজনীতি অংশগ্রহণের সমস্যা লিখ।
অথবা, গ্রামীণ রাজনীতিতে জন অংশ গ্রহণের প্রতিবন্ধকতা লিখ।
অথবা, গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পাঁচটি প্রধান সমস্যা লিখ।
অথবা, গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের বাধা উল্লেখ কর।
অথবা, গ্রামীণ রাজনীতিতে জন অংশগ্রহণের সমস্যা নির্ণয় কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
প্রতিটি দেশের শাসন ক্ষমতা ও শাসনকার্য পরিচালনার ক্ষেত্রে গ্রামীণ ও শহর উভয় সমাজের রাজনীতিই সমানভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এবং সম্পর্কযুক্ত। এদিক থেকে বিবেচনা করলে জাতীয় পর্যায়ের রাজনীতি ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গ্রামীণ রাজনীতি বলা হয়ে থাকে। কিন্তু গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়।
গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সমস্যা : গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নানাবিধ সমস্যা মানুষকে বাধাগ্রস্ত করে । নিম্নে গ্রামীণ রাজনীতিতে অংশগ্রহণের সমস্যাসমূহ তুলে ধরা হলো :
১. শিক্ষার অভাব : রাজনীতিতে অংশগ্রহণের অন্যতম নিয়ামক বা পূর্বশর্ত হচ্ছে শিক্ষা। কিন্তু বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার হার অতিমাত্রায় কম। এ অশিক্ষিত জনগোষ্ঠী রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে না এবং তাদের পক্ষে কার্যকর ও অর্থপূর্ণ অংশগ্রহণ সম্ভব নয় । সুতরাং শিক্ষার অভাবই গ্রামীণ জনগণের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করার অন্যতম কারণ।
২. সচেতনতার অভাব : সামাজিক ও রাজনৈতিক সচেতনতা রাজনীতিতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক। সচেতন ব্যক্তিরা অসচেতন ব্যক্তির তুলনায় বেশি মাত্রায় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। রাজনীতি বিষয়ে গ্রামীণ এলাকার লোকজনের সচেতনতা খুবই কম। গ্রামীণ জনগণ অন্তর্মুখী এবং নিজেদের চারপাশের কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখে। তাই গ্রামের মুষ্টিমেয় অভিজাত শ্রেণির লোক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ ও প্রভাব খাটানোর সুযোগ পেয়ে থাকে। সুতরাং সচেতনতার অভাব সাধারণ জনগণকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ থেকে দূর রাখে।
৩. নৈরাশ্যবাদী মনোভাব : গ্রামীণ সমাজের অধিকাংশ মানুষই অশিক্ষিত কুসংস্কারাচ্ছন্ন, অদৃষ্টবাদী ও নৈরাশ্যবাদী গ্রামীণ জনগণের এই সমস্ত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য তাদেরকে রাজনীতিতে অংশগ্রহণের উপর নৈতিকবাচক প্রভাব বিস্তার করে।
৪. ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের অভাব : বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনা নেই বললেই চলে এবং মুষ্টিমেয় ব্যক্তি প্রভুত্বকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সমাজে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী চেতনা বিকাশে শিক্ষা, সচেতনতা ও ব্যক্তি নির্ভর অর্থনীতি সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পরিবারকেন্দ্রিক গ্রামীণ জীবনে পরিবার প্রধানের কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যক্তিত্ববাদী চেতনা বিকাশের অন্যতম অন্তরায়।
৫. ঐতিহ্যের অভাব : স্বাধীনতা পূর্ব সময় থেকে গ্রামীণ রাজনীতি পরিচালিত হয়ে আসছে মুষ্টিমেয় এলিটদের দ্বারা স্বাধীনতা পরবর্তী সময়েও এ গতিধারা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাই গ্রামীণ রাজনীতি বিকাশের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যের অভাবও একটি অন্যতম কারণ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, রাজনীতির সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী পিছিয়ে।বিভিন্ন প্রতিকূলতা গ্রামীণ জনগণের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততাকে হ্রাস করেছে।