অথবা, সংক্ষেপে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা ও কার্যাবলিসমূহ আলোচনা কর।
অথবা, গ্রামীণ ব্যাংকের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যাবলি আলোচনা কর।
উত্তর৷। ভূমিকা : গ্রামীণ ব্যাংক বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। মানুষের নিজের কর্মক্ষমতা, যোগ্যতা, পরিশ্রম ও মেধার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে গ্রামীণ ব্যাংক ঋণদান কর্মসূচির মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। শুরু থেকে ২০০৯ সালের জুন পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংক ৪৯৮.৩১ বিলিয়ন টাকা বিলিবণ্টন করেছে। গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান (২০০৯) সদস্য সংখ্যা ৮০ লক্ষ। গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের হার ৯৮.৬৯%। উল্লেখ্য গ্রামীণ ব্যাংক দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে মৌলিক ঋণ, গৃহঋণ, উচ্চশিক্ষার জন্য ঋণ ও ভিক্ষুকদের জন্য ঋণ কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংক কৃষি উন্নয়ন ও বনায়ন কর্মসূচি, চিংড়ি খামার কর্মসূচি, জয়সাগর মৎস্য খামার প্রকল্প কর্মসূচিনহ আরো অনেক ধরনের কর্মসূচি পরিচালনা করে দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।
গ্রামীণ ব্যাংকের ৪টি ভূমিকা ও কার্যাবলি : নিম্নে গ্রামীণ ব্যাংকের ৪টি কার্যাবলি আলোচনা করা হলো :
১. কর্মসংস্থান প্রকল্প : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। স্ব- কর্মসংস্থান, কুটিরশিল্প, প্রশিক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে। শিক্ষানবিস সমাজকর্মী/ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা এক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহ করে মানুষকে আত্মকর্মসংস্থানে সাহায্য করতে পারে।
২. চরম দরিদ্রতা দূরীকরণ : গ্রামীণ ব্যাংকের অন্যতম কাজ হলো গ্রামীণ দুঃস্থ, অসুবিধাগ্রস্ত ও নিঃস্ব মহিলাদের একত্রিত করে তাদের চরম দারিদ্র্য অবস্থা থেকে মুক্ত করা। এরই মধ্যে ব্যাংকের অসংখ্য সদস্য ঋণগ্রহণ করে।প্রকৃত দরিদ্র মানুষ যাতে সহজে ঋণ নিয়ে তাদের দরিদ্রদশা অতিক্রম করতে পারে সে লক্ষ্যে শিক্ষানবিস সমাজকর্মী/ ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা তাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতে পারে।
৩. সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি : সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অন্যতম কার্যক্রম। দেশের প্রতিটি জমিকে ব্যবহারের জন্য এ কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। এজন্য গ্রামীণ ব্যাংকের বিভিন্ন ইউনিট বিভিন্ন চারা যেমন-কৃষ্ণচূড়া, নারিকেল, মেহগনি, আমড়া, লিচু প্রভৃতি ফল ও গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। ব্যাংকের খামারে উৎপাদিত চারা যাতে স্থানীয় জনগণ সহজে পেতে পারে সে লক্ষে শিক্ষানবিস সমাজকর্মী/ ব্যবহারিক প্রশিক্ষণার্থীরা সাহায্য করতে পারে। তাছাড়া শিক্ষানবিস সমাজকর্মীরা সামাজিক বনায়ন সৃজনে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।
৪. ধানকল স্থাপন : অক্ষম দরিদ্র মহিলাদেরকে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা দানের লক্ষ্যে ধানকল স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি গ্রামের মহিলাদের স্বাবলম্বী করার একটি অন্যতম কার্যক্রম।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, গ্রামীণ ব্যাংকের অনেকগুলো কর্মসূচি রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ডিপোজিট ক্রিম, অগভীর নলকূপ ও ধানকল স্থাপন, বন্যায় ত্রাণ কার্যক্রম, ঋণগ্রহীতাদের জন্য পেনশন তহবিল ইত্যাদি। ২০০৯ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তথ্যানুযায়ী গ্রামীণ ব্যাংক ২,৫৬২টি শাখার মাধ্যমে ৮৩,৪৯৮টি গ্রামে তার কার্যক্রম বিস্তৃত করেছে। এ পর্যন্ত (২০০৯ মার্চ) গ্রামীণ ব্যাংকের মোট সদস্য হয়েছে (প্রায়) ৮০ লক্ষ জন। এসব সদস্য ঋণ সুবিধাসহ নানারকম সুবিধা ভোগ করে যাচ্ছে।