গ্রামীণ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যগুলো লিখ। বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা পর্যালোচনা কর।

অথবা, গ্রামীণ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যগুলো কি কি?
অথবা, বাংলাদেমের দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা আলোচনা কর।
অথবা, গ্রামীণ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যগুলো উল্লেখপূর্বক বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে এর ভূমিকা সমূহ বিশ্লেষণ কর।
উত্তর।৷ ভূমিকা :
গ্রামীণ ব্যাংক বাংলাদেশের একটি বিশেষায়িত ব্যাংক। এটি কোনো NGO নয়। গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৭৬ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে জোবরা গ্রামে সর্বপ্রথম ক্ষুদ্র ঋণদান কর্মসূচির সূচনা করেন। ব্যক্তিগতভাবে ঋণদানের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তীতে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ঋণদান কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্য : গ্রামীণ ব্যাংকের বৈশিষ্ট্যগুলো নিয়ে আলোচনা করা হলো :

*গ্রামীণ ব্যাংক একটি বিশেষায়িত ব্যাংক,

*গ্রামীণ ব্যাংক প্রধানত গ্রামীণ মহিলাদের নিয়ে কাজ করে থাকে।

*গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দিয়ে থাকে।

*গ্রামীণ দরিদ্র আর্থসামাজিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংক কাজ করে থাকে।

*গ্রামীণ ব্যাংক আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিমূলক একটি ব্যাংক।

*এটি দরিদ্র নারী পুরুষের কাছে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্যাংক।

*গ্রামীণ মহাজনদের কাছ থেকে গ্রামের দরিদ্র মানুষকে রক্ষা করার ব্যাংক।

*এটির প্রধার বৈশিষ্ট্য হলো, এটি অধিক আয়, অধিক ঋণ ও অধিক বিনিয়োগ পদ্ধতির সম্প্রসারণে কাজ করে।

*এটি গরীবদের বিনা সুদে বা অল্পসুদে ঋণ প্রদান করে।

*গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়।

*এটি গ্রামীণ দুস্থ, অসুবিধাগ্রস্ত ও নিঃস্ব মহিলাদের একত্রিত করে তাদের জীবনমান উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড
পরিচালিত করে।

*এটি গৃহঋণ, উচ্চশিক্ষা ঋণ, ভিক্ষুকদের জন্য ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করে।

*এটি ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা ভিত্তিক ব্যাংক।

*এটি শিক্ষার মান উন্নয়নমূলক ব্যাংক।

*এর পরিচালনা পরিষদে সরকারি-বেসরকারি ব্যক্তিবর্গ থাকেন।
দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা : নিম্নে জাতীয় উন্নয়নে বিশেষ করে গ্রামীণ দারিদ্র্য বিমোচনে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা বা কার্যাবলি বর্ণনা করা হলো :
১. ঋণদান কর্মসূচি : ঋণদান কর্মসূচি গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অন্যতম কার্যক্রম। বিভিন্ন খাতে ঋণদানের মাধ্যমে
গ্রামীণ দরিদ্র মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন করে থাকে গ্রামীণ ব্যাংক।এ পর্যন্ত ১০৪টি শাখা থেকে দেশের ২০ লাখ মানুষকে প্রায় ৩৮১.২৩ মিলিয়ন টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। দেশের ৫৬ হাজার গ্রামে এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর ঋণ পরিশোধের হার ৯৮.৮৫%।
২. গৃহনির্মাণ কার্যক্রম : ১৯৮৪ সালে গৃহনির্মাণ কর্মসূচি চালু করা হয় এবং ১৯৮৭ সালে এ প্রকল্পের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। ঋণের টাকা দিয়ে সিমেন্টের পিলারের উপর টিনের তৈরি এ ঘর বন্যার উপযোগী। এ ঘর তৈরির ব্যাপকতার কারণে ঋণের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। পাঁচ বছরের মধ্যে পরিশোধের শর্তে ৮% সুদের ভিত্তিতে সদস্যরা ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত গৃহঋণ পেয়ে থাকে।
৩. কর্মসংস্থান প্রকল্প : গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গ্রামীণ ব্যাংক বিশেষ কর্মসূচি হাতে নেয়। স্ব- কর্মসংস্থান, কুটিরশিল্প, প্রশিক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ খাতের মাধ্যমে গ্রামের দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে থাকে।
৪. জয়সাগর মাছ প্রকল্প : গ্রামীণ ব্যাংকের নিজস্ব মৎস্য প্রকল্প রয়েছে। ১৯৮৬ সালে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার ৪টি থানায় এ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে এবং ঐ বছরই মাছ বিক্রি করে ব্যাংক দশ লাখ টাকা আয় করে।
৫. ধানকল স্থাপন : অক্ষম দরিদ্র মহিলাদেরকে আত্মকর্মসংস্থানে সহায়তা দানের লক্ষ্যে ধানকল স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি গ্রামের মহিলাদের স্বাবলম্বী করার একটি অন্যতম কার্যক্রম।
৬. কৃষি উন্নয়ন কর্মসূচি : কৃষি উৎপাদন খাতে সহায়তা দানের জন্য যৌথ উদ্যোগে গ্রামীণ ব্যাংক অগভীর নলকূপ স্থাপনের উদ্দেশ্যে এই কার্যক্রম গ্রহণ করে। ১৯৮১ সালে প্রথম যৌথভাবে এ খাতে ঋণদান করা হয় এবং এক বছরের মধ্যে সদস্যগণ ঋণ পরিশোধ করে দেয়।
৭. পোনা উৎপাদন কেন্দ্র : এটি গ্রামীণ ব্যাংকের একটি সাফল্যজনক কর্মসূচি। ১৯৮৬ সালে পোন কার্যক্রমের আওতায় ব্যাংক প্রায় ৬ কোটি ৬০ লাখের মতো পোনা উৎপাদন করে বাংলাদেশের সকল হ্যাচারি মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ পোনা উৎপাদনের রেকর্ড করে।
৮. চকরিয়া চিংড়ি খামার : গ্রামীণ ব্যাংক মৎস্য উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিকট থেকে তিনশ একর জমি লিজ নিয়ে চকরিয়ায় চিংড়ি চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করে। ১৯৮৬ সালে ২৩ লক্ষ টাকার চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব হয়।
৯. মহিলাদের জন্য ঋণ কর্মসূচি : গ্রামীণ ব্যাংক ঋণ প্রদানে মহিলাদের বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে। উদাহরণস্বরূপ,১৯৯৮ সালে ঋণগ্রহণকারীর শতকরা ৯৬ ভাগই ছিল মহিলা। গ্রামীণ বিভিন্ন উপার্জনশীল প্রকল্পে দরিদ্র মহিলাদের ঋণ প্রদান করে থাকে ব্যাংক।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, গ্রামের দরিদ্র ও ভূমিহীন জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের ভূমিকা অতুলনীয়। মাত্র দুই দশকের ব্যবধানে গ্রামীণ ব্যাংক সমগ্রবিশ্বে পরিচিতি লাভ করেছে। এটি এদেশের দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে আলোকবর্তিকা হিসেবে আজও কাজ করে যাচ্ছে।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%a4%e0%a7%83%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%af%e0%a6%bc-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%ac%e0%a6%bf%e0%a6%ad%e0%a6%bf%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a8-%e0%a6%95/