গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান বা উৎস হিসেবে স্বাধীন চলক সমূহের বর্ণনা দাও।

অথবা, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান হিসেবে স্বাধীন চলকসমূহের বিবরণ দাও।
অথবা, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান হিসেবে স্বাধীন চলকগুলো সম্পর্কে আলোচনা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামো গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞানের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। বিগত দিনগুলোতে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপর কিছু কিছু নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা হয়েছে। এসব গবেষণা থেকে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর অনেক উপাদান খুঁজে পাওয়া গেছে। গবেষণার উৎস থেকে জানা যায়, গ্রামীণ সমাজে কতিপয় ধনী ব্যক্তি সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গ্রামকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অন্যের আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সামর্থ্যই ক্ষমতা।
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপাদান বা উৎস : গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উপর নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতাত্ত্বিক গবেষণা থেকে গ্রাম সমাজের ক্ষমতা কাঠামোর অনেক উপাদান পাওয়া যায়। দেখা যায়, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ১৯টি উপাদান জড়িত থাকে। এ উপাদান বা উৎসসমূহ একটি অপরটির সাথে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বিশ্লেষণের সুবিধার্থে উপাদানসমূহের ছয়টিকে স্বাধীন চলক এবং বাকি তেরোটিকে নির্ভরশীল চলক হিসেবে চিহ্নিত করা যায়। সবগুলো চলকের মধ্যে ভূমি মালিকানা হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি স্বাধীন চলক। অন্যান্য চলকগুলো ভূমি মালিকানার উপরই নির্ভরশীল। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর এসব উপাদান বা
চলকসমূহের পর্যায়ক্রমিক সূক্ষ্মদর্শী আলোচনা করা হলো :
স্বাধীন চলক (Independent variable) : গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর স্বাধীন চলকসমূহ নিম্নরূপ :
১. ভূমি মালিকানা : ভূমি মালিকানা হচ্ছে গ্রামীণ সমাজে ক্ষমতা কাঠামোর একটা অন্যতম মৌলিক উপাদান। বৃহৎ ভূমি মালিকানা বর্গাচাষি এবং দিনমজুরদের উপর ক্ষমতা খাটিয়ে থাকে। ভূমি থেকে প্রাপ্ত অর্থ অন্যান্য আয়ের পথও খুলে দেয়, যা একটি পরিবারের সামাজিক অবস্থান নিরূপণ করে। এভাবে দেখা যায়, একজন ভূস্বামী অর্থনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী এবং অনেক লোকই তার নিয়ন্ত্রণাধীন।
২. অর্থনৈতিক শক্তি : অর্থনৈতিক শক্তিও গ্রামীণ সমাজকাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অর্থনৈতিক শক্তি গড়ে উঠে কৃষি ও অকৃষিখাতের সমন্বয়ে। গ্রামীণ পরিবারে অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারীরা সাধারণত অন্যান্য পরিবারের সদস্যদেরকে নিজেদের ক্ষমতার আওতার মধ্যে ধরে রাখতে পারে। গ্রামীণ ক্ষমতার সম্ভাব্য সকল প্রকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারাই অংশগ্রহণ করে।
৩. সমাজে নেতৃত্ব দান : গ্রাম সমাজের নেতৃত্ব দানে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ভূমিকা খুবই অগ্রগণ্য। অধিকাংশ ক্ষেত্রে যারা অধিক ভূমির মালিক, তারাই গ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। সমাজের নেতারা সাধারণত দু’টি কাজ করে, যেমন-
ক. ধর্মীয় প্রথা ও উৎসগুলোর পরিকল্পনা ও তদারক এবং খ. সামাজিক সমস্যা, লোকজনের বিবাদ মীমাংসার জন্য সালিশি ব্যবস্থা করে।
৪. বংশীয় ক্ষমতা : গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে বৃহৎ বংশের লোকেরা যথেষ্ট ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকে। কেননা, তাদের থাকে এক বিরাট জনবল। উচ্চবংশীয় পরিবারগুলো অন্যান্য পরিবারকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে।
৫. জ্ঞাতিগোষ্ঠী : গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উৎস হিসেবে জ্ঞাতিগোষ্ঠীর প্রভাব উল্লেখ করা যায়। গ্রাম প্রশাসনের নিকটতম প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। সাধারণভাবে দেখা যায় এসব সামাজিক প্রতিষ্ঠানে নেতৃত্ব করার
জন্য প্রয়োজন অধিক পরিমাণে আত্মীয়স্বজনের সাহায্য। ক্ষমতায় অংশগ্রহণের জন্য সবসময়ই চলে এক গোষ্ঠীর সাথে অন্য গোষ্ঠীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। গ্রামীণ ভোটাভুটির সময় অধিক আত্মীয়স্বজনের অধিকারী ব্যক্তিরাই জয়লাভ করে থাকে।
৬. ব্যক্তিগত গুণ াবলি : ব্যক্তিগত গুণাবলির সাহায্যেও মানুষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে থাকে। যেমন- কোন ব্যক্তি দেশের জন্য মুক্তিযুদ্ধ করে সুনাম অর্জন করে থাকলে এর প্রভাব গ্রামবাসীর উপরও পতিত হয়। তাতে দেখা যায়, গ্রামের মানুষ তাকে নেতা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর উৎস বা উপাদানসমূহ দুষ্প্রাপ্য উপায়ে উদ্ঘাটিত হয়েছে। এদের মধ্যে বেশকিছু স্বাধীন চলক রয়েছে যেগুলো গ্রামীণ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী হিসেবে পরিচিত।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%b8%e0%a6%aa%e0%a7%8d%e0%a6%a4%e0%a6%ae-%e0%a6%85%e0%a6%a7%e0%a7%8d%e0%a6%af%e0%a6%be%e0%a6%af%e0%a6%bc%e0%a6%97%e0%a7%8d%e0%a6%b0%e0%a6%be%e0%a6%ae%e0%a7%80%e0%a6%a3-%e0%a6%b8%e0%a6%ae/