অথবা, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর দাতা-গ্রহীতা বা মাতব্বর মক্কেল সম্পর্কের স্বরূপ তুলে ধর।
অথবা, গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে Patron Client সম্পর্কের প্রভাব তুলে ধর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে Patron Client সম্পর্কের প্রভাব বর্ণনা কর।
অথবা, বাংলাদেশের গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে দাতা-গ্রহীতা বা মাতব্বর-মক্কেল সম্পর্কের প্রভাব লিখ।
উত্তর৷ ভূমিকা : বাংলাদেশের সমাজ ও সংস্কৃতিতে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠমোর নৃতাত্ত্বিক ও সমাজতান্ত্রিক গবেষণায় বেশ কিছু মৌলিক বিষয় আলোচিত হয়েছে।
গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে দাতা-গ্রহীতা বা মাতব্বর মক্কেল (Patron client) সম্পর্কের প্রভাব : গ্রামীণ ক্ষমতা ও কর্তৃতের উৎস হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি বংশমর্যাদা, কৌলিন্য, অর্থনৈতিক ক্ষমতা,লোকবল, রাজনৈতিক সংযোগ ইত্যাদি। এ বিভিন্ন উপাদান আবার পরস্পরের সাথে সংযুক্ত। গ্রামীণ কৃষক সমাজে পুঁজিবাদী উন্নয়ন সম্প্রসারিত হলে অর্থনৈতিক ক্ষমতা কর্তৃত্বের উৎস হিসেবে বিশেষভাবে কার্যকর হয়। একজন অর্থবান লোকে বংশগত কৌলীন্য না থাকলেও কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে বা রাজনৈতিক ক্ষমতার দিক থেকে তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং বলা যায় যে, অর্থনৈতিক ক্ষমতা এক পর্যায়ে বংশ কৌলীন্য যুক্ত করে। এক্ষেত্রে গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোর স্বরূপ বিশ্লেষণের জন্য মক্কেল- মুরুব্বি সম্পর্ক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। ইংরেজি Patron হচ্ছে “a person of power status, authority and influence” অর্থাৎ, ক্ষমতাবান মর্যাদাসম্পন্ন কর্তৃত্বপরায়ণ ও প্রভাবশালী ব্যক্তিরা দাতা বা মুরুব্বি হতে পারেন। পীর-আউলিয়ারা তাঁদের মুরিদদের সহযোগিতা করে থাকে। বিনিময়ে তাঁরা পায় রাজনৈতিক সমর্থন বা অন্য কোনো ধরনের উপকার। দাতা-গ্রহীতা সম্পর্ক সে জাতীয় সমাজগুলোতেই বিকাশলাভ করে বেশি, যেখানে সামাজিক বৈষম্য বেশ ব্যাপক। অর্থনেতিক সম্পদ, রাজনৈতিক ক্ষমতা, শিক্ষা ইত্যাদি অসমভাবে বণ্টিত। একই সাথে সমাজগুলোর বাইরের সাথে সম্পর্ক তুলনামূলকভাবে ক্ষীণ। অর্থনৈতিক চাপ বেশি হলে নিরাপত্তার অভাব দেখা দিলে মক্কেল-মুরুব্বী সম্পর্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। একটি গ্রামে যদি। সামাজিক সচলতা (Social mobility) কম থাকে তবে এ সম্পর্কের বিস্তৃতি ঘটতে পারে। বাংলাদেশের গ্রামীণ সমাজে ভূমি হলো সম্পদের একটি সনাতন উৎস। ভূমি হলো প্রধান সম্পদ। এটি হলো অর্থনৈতিক বা সামাজিক অবস্থানের প্রধান চলক বা পরিচায়ক। উত্তরাধিকারসূত্রে এবং স্ব-উপার্জনের মাধ্যমে ভূমি লাভ করে। এক ব্যক্তির বিপুল জমি থাকলে নিজে সব চাষ না
করে বর্গা দিয়ে থাকে। ভূমির মালিকানা থাকলে বিভিন্ন ক্ষমতার সৃষ্টি হয়। বৃহৎ জমির মালিকরা বর্গাচাষি ও দিনমজুরদের একটা অংশের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। ফলে তাদের সাথে ভূমির মালিকদের একটি Patron-client সম্পর্ক তৈরি হয়। এখানে ভূমির মালিকরা Patron এবং অন্যান্যরা হলো Client। ভূমি একটি পরিবারের সামাজিক অবস্থা নিশ্চিত করে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বাংলাদেশে দাতা-গ্রহীতা বা মাতব্বর মক্কেল (Patro Client) সম্পর্ক গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বর্গাচাষিদের ক্ষেত্রে সামন্ততান্ত্রিক এ ব্যবস্থা আজ আমাদের দেশে বিদ্যমান।