গারো সমাজের পরিবর্তনের কারণগুলো আলোচনা কর।

অথবা, পরিবর্তিত গারো সমাজের পরিবর্তনের কারণগুলো বর্ণনা কর।
অথবা, গারো সমাজ কেন পরিবর্তন হচ্ছে?
অথবা, গারোদের পরিবর্তনের কারণগুলো কী কী?
উত্তর৷ ভূমিকা :
গারো সমাজ নানা কারণে পরিবর্তিত হচ্ছে। কৃষিতে নতুন পদ্ধতি গ্রহণ, বাজার অর্থনীতির অনুপ্রবেশ, প্রতিবেশী বাঙালি সমাজের সঙ্গে যোগাযোগ, খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ, আধুনিক শিক্ষা এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় প্রশাসনিক প্রভাব ইত্যাদির ফলে গারো সমাজের পরিবর্তন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।
১. পরিবার ও বিবাহ ব্যবস্থার পরিবর্তন : গারো পরিবারে ও বিবাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসেনি। তবে যতটুকু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সেটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। শিক্ষিত গারো মাতৃবাসের বিপরীত রীতি পিতৃবাসে অভ্যস্ত হচ্ছে।
২. অর্থনৈতিক পরিবর্তন : আগের জুম চাষের স্থলে হালকৃষি প্রবর্তিত হয়েছে। এতে বিভিন্ন ধরনের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলনের ফলে আর্থিক বৈষম্য ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৩. ধর্মীয় পরিবর্তন : বর্তমান বাংলাদেশে গারোদের ৯০% খ্রিস্টান ধর্মানুসারী। ঐতিহ্যবাহী ধর্মের স্থলে অনেকেই তাই খ্রিস্টীয় ধর্ম অনুসরণ করছে। খ্রিস্টীয় চার্চ এখন তাদের ধর্মের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠান।
৪. রাজনৈতিক পরিবর্তন : গারো সমাজ এখন আর বিভিন্ন জনপদ নয়। এখন তারা বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় শাসনাধীন। সেখানে বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামো এবং রাজনৈতিক অনুষ্ঠান প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। ফলে ঐতিহ্যবাহী গারো গ্রামে প্রধানের গুরুত্ব কমে গিয়েছে।
৫. শিক্ষায় পরিবর্তন : ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে গারো অঞ্চলে খ্রিস্টান মিশনারি ও ব্যাপটিস্টদের আগমন ঘটে। তারা গারোদের কেবল যে খ্রিস্টধর্মেই দীক্ষিত করেছে তা নয়, সে সাথে গারো এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। গারোদের শিক্ষার হার আজকাল ২০% ছাড়িয়ে গিয়েছে। শিক্ষার প্রসার ঘটার ফলে গারো সমাজে গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকে চাকরি করছে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, বস্তুত গারো সমাজের স্তরবিন্যাসে শিক্ষা অচিরেই এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে হয়।