গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া বলতে কী বুঝ?

অথবা, গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া কী?
অথবা, গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া কাকে বলে?
অথবা, গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়ার সংজ্ঞা দাও।
অথবা, গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়ার পরিচয় দাও।
অথবা, গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়ার ধারণা দাও ।
উত্তর৷ ভূমিকা : ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যার স্বরূপ নির্ণয় সমাধানমূলক কর্ম প্রয়াসকে সাধারণভাবে তিনটি শ্রেণিতে বিন্যস্ত করা যায়। যথা : সমস্যা নির্ণয়ে গতিশীল প্রক্রিয়া,সমস্যা নির্ণয়ে যান্ত্রিক বা চিকিৎসামূলক প্রক্রিয়া এবং সমস্যা নির্ণয়ে ঐতিহাসিক বা উৎপত্তি সম্বন্ধীয় প্রক্রিয়া।
গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া : নিম্নে গতিশীল প্রক্রিয়া সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো :
১. সমস্যা নির্ণয়ে গতিশীল প্রক্রিয়া : সমস্যা নির্ণয়ে গতিশীল প্রক্রিয়া (Dynamic process) হচ্ছে ব্যক্তি যে
সমস্যায় নিপতিত হয়েছে সে অবস্থায় যে সমস্ত বিষয় বা শক্তিসমূহ পরস্পর ক্রিয়াপ্রতিক্রিয়ায় সক্রিয় রয়েছে তার একটি সামগ্রিক চিত্র দাঁড় করানো ও সে সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা। ঐ সমস্ত বিষয়ের প্রভাব বর্তমানে ব্যক্তির মানস
কাঠামোতে ও সে যে সামাজিক অবস্থার মধ্যে আছে তাতে এবং সর্বোপরি নিজ পরিবেশের মধ্যে সেগুলো কিভাবে ও
কতটুকু ক্রিয়াশীল রয়েছে তা নির্ণয় করতে সচেষ্ট হওয়া। অর্থাৎ গতিশীল ডায়াগনসিসে সাহায্যার্থীর সমস্যা পরিস্থিতির সাথে মিথস্ক্রিয়াগত শক্তিসমূহের পারস্পরিক সম্পর্ক দ্বারা নিরূপণ করা হয়। পার্লম্যানের ভাষায়- The dynamic diagnosis is a kind of cross-sectional view of the forces interacting in the client problem situation.
এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মূলত নিম্নোক্ত বিষয়গুলো তার উপর গুরুত্ব দিয়ে তা উদ্ঘাটন করতে তৎপর হতে হয়।
১. মূল অসুবিধা কি? কি কি মানসিক, পারিবারিক অথবা সামাজিক বিষয় সমস্যাটির জন্ম দিয়েছে?
২. ব্যক্তির কল্যাণ ও সাথে সাথে অন্যের জীবনে বা কল্যাণে সমস্যাটি কি প্রতিকূল প্রভাব বিস্তার করছে?
৩. ব্যক্তি তার সমস্যার কিরূপ সমাধান চায়?
৪. সমাধানের ব্যাপারে ব্যক্তি ও তার পরিবেশের মধ্যে কি কি উপায় বা অনুকূল অবস্থা বর্তমান এবং কি কি সম্পদ ও কিভাবে সাহায্য কর্মসূচি প্রণয়ন দরকার যা দ্বারা সমস্যা মোকাবিলা করা সম্ভব।
সাধারণভাবে সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়ায় যেসব পর্যায়ক্রমিক পদক্ষেপ রয়েছে গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রেও
এসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে অগ্রসর হতে হয়। তবে অন্যান্য প্রক্রিয়ার সাথে এর মূল পার্থক্য হলো তাতে সমস্যার উদ্ভব বিকাশ ধারার একটি ধারাবাহিক বিবরণ তৈরি না করে সমস্যাকে কতিপয় শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করার রীতিবদ্ধ প্রয়াস না চালিয়ে সমস্যা পরিস্থিতিকে ব্যক্তির নিজস্ব ও পরিবেশগত বিভিন্ন ক্রিয়াশীল শক্তি উপাদানের মিথস্ক্রিয়া ব্যাখ্যা করে সমাধান পরিকল্পনা গ্রহণ করা। ফলে তা একদিকে যেমন পরিবর্তনশীল বাস্তবতা সমস্যার স্বরূপ নির্ণয় করে;
অন্যদিকে তেমন কাঙ্ক্ষিত ও সম্ভাব্য সম্পর্ক সামর্থ্যের আলোকে সমাধান পন্থা নির্দিষ্ট করে। সামগ্রিক দিক থেকে গতিশীল সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া উপরে আলোচিত প্রকৃতি লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও বিবেচ্য বিষয়াদির আলোকে নিম্নরূপ পর্যায়ক্রমিক কর্মধারায় ব্যাপ্ত হয়।
ক. পারস্পরিক সম্পর্ক সূত্রে মনোসামাজিক তথ্যাদির বিশ্লেষণ : মনোসামাজিক অনুধ্যানে প্রাপ্ত তথ্যাদির মধ্যে ব্যক্তির কোন মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক উপাদানের মিথস্ক্রিয়ায় কিরূপ সমস্যার উদ্ভব বিস্তার ঘটেছে, ব্যক্তি এমন অবস্থায় কি ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়েছে ও সমাধান প্রত্যাশা করছে এবং শক্তি সামর্থ্য ও সমর্থন আয়োজনের কতটা ব্যবস্থা করা যায় ইত্যাদি নির্ধারণ হলো বিশ্লেষণের কাজ। এ ধরনের বিশ্লেষণে তথ্যাদিকে বৈশিষ্ট্যগত দিক বিবেচনায় সাজিয়ে নিতে হয়।এবং সে আলোকে প্রস্থচ্ছেদমুখিতায় বিভিন্ন পারস্পরিক ক্রিয়াশীল উপাদানের সম্পর্ক খুঁজে সমস্যার কারণ, স্বরূপ ও প্রকৃতি উদ্ঘাটন করতে হয়।
খ. সমস্যার বিস্তার ধারা দেখে বিভিন্ন মানগত অবস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন : এ পর্যায়ে সমস্যা কোন কোন উপাদানের ক্রিয়াশীলতা কোন কোন দিকে বিস্তৃত হয়েছে তা নিরূপণ হয়। তারপর সে প্রেক্ষিতে বিভিন্ন সেবা সুবিধার মানগত অবস্থার মধ্যে বিস্তারের পর্যায়কে সম্পর্কযুক্ত করতে হয়।
গ. সেবা সুবিধার প্রেক্ষিতে সমস্যার শ্রেণিবিন্যাস : এক্ষেত্রে সমাধানমূলক ব্যবস্থার সুযোগ সুবিধা ও ব্যক্তির শক্তি সামর্থ্যের আলোকে সমস্যার শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এরূপ শ্রেণিবিন্যাস সাধারণত বর্ণনামূলক হয়ে থাকে। তাতে ব্যক্তি
আচরণের লক্ষণ ও বিভিন্ন সেবা সুবিধা প্রাপ্তির ধরন বিবেচনায় আসে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সমস্যাগত ব্যক্তি যিনি এজেন্সি বা সমাজকর্মীর নিকট পেশাগত সাহায্যের জন্য আসেন তাকে জানার ও বুঝার মাধ্যম হলো তার আচরণের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তগুলোর অর্থ অন্বেষণ করা। তার ধ্যানধারণা, আচার আচরণ, আবেগ অনুভূতি, দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিটি দিকই সমস্যা নির্ণয়ে বিশেষ অর্থ বহন করে। এরূপ গতিময় আচার আচরণের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির সমস্যা নির্ণয় প্রক্রিয়া সদা পরিবর্তিত হয়। তাই এক্ষেত্রে গতিশীল প্রক্রিয়া সমস্যা নির্ণয়ে ভূমিকা পালন করে।