অথবা, ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্রাম সমাজের স্তরবিন্যাস সম্পর্কে লিখ।
অথবা, ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্রাম সমাজের শ্রেণিবিন্যাস কীরূপ?
অথবা, ক্ষমতার ভিত্তিতে গ্রাম সমাজের শ্রেণিবিন্যাস সম্পর্কে বর্ণনা কর।
অথবা, ক্ষমতার ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।
উত্তর ভূমিকা : সামাজিক স্তরবিন্যাস মানবসমাজের একটি অভিন্ন বৈশিষ্ট্য। সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে আমরা বুঝি সমাজের মানুষকে উঁচু, নিচু, সমান বিভিন্ন সামাজিক পদমর্যাদায় ভাগ করা। সমাজের মানুষকে বিভিন্ন শ্রেণি, জাতি ও বর্ণে ভাগ করা হয়। তাই সামাজিক স্তরবিন্যাস বলতে সমাজে ব্যক্তি, গোষ্ঠী এবং শ্রেণির অসম বিন্যাস বা অসম মর্যাদার বিন্যাসকে বুঝায় ।
ক্ষমতার ভিত্তিতে সামাজিক অসমতা : ক্ষমতার ভিত্তিতে একটি গ্রামের সামাজিক স্তরবিন্যাস নিম্নরূপ :
১. ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার : এরা সাধারণত ধনী কৃষক পরিবার থেকে আসে। তবে প্রান্তির পরিবারে শিক্ষিত যুবকও এ স্তরে স্থান করে নেয়। গ্রামীণ সালিশ দরবারে এদের ভূমিকা বেশ প্রভাবশালী ও গুরুত্বপূর্ণ।
২. গ্রামীণ মোড়ল বা মাতব্বর : গ্রামীণ নেতৃত্বে মোড়ল বা মাতব্বরের বেশ প্রভাব রয়েছে। এমন অনেক মোড়ল আছেন যারা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বারও বটে। গ্রামের বিচার সালিশ করার জন্য মোড়লরা অনেক সময় মেম্বার – চেয়ারম্যানদের আহ্বান জানায়।
৩. পাড়া বা কোন দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ : এরা গ্রাম, গোষ্ঠী বা দলের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি। এরা মোড়ল এমনকি মেম্বার চেয়াম্যানদের উপরও বেশ প্রভাব রাখতে পারে
৪. নেতৃত্ব সম্পর্কে সজাগ ও সক্রিয় গ্রাম সদস্য : এরা গ্রামের কোন গোলযোগ বা বিতর্কিত বিষয়ের প্রতি উৎসাহী এবং মত প্রকাশে ইচ্ছুক। সালিশ দরবারে এরা অভিমত ব্যক্ত করে। তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের মতো প্রভাব খাটাতে পারে না। গ্রামীণ নেতৃত্ব ও রাজনীতি সম্পর্কে উদাসীন সাধারণ গ্রাম সদস্য : এরা গ্রামের কোনো সালিশ বৈঠকে উপস্থিত হয় না। আর হলেও প্রায়ই শ্রোতা হিসেবে নীরব ভূমিকা পালন করে এবং মত প্রকাশে অনীহা দেখায়।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, ক্ষমতা গ্রাম সমাজের স্তরবিন্যাসের একটি অন্যতম মাধ্যম। ক্ষমতার অধিকারী হয়ে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী ক্ষমতাহীনদের উপর নিজেদের অনেক সিদ্ধান্ত জোরপূর্বক চাপিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।