অথবা, কৃষিভিত্তিক সমাজের সমাজ কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
অথবা, কৃষিভিত্তিক সমাজের সমাজ কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
অথবা, কৃষিভিত্তিক সামজের সমাজ কাঠামো ও প্রকৃতি ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা : গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান গ্রাম জীবন সম্পর্কে একটা সুনির্দিষ্ট জ্ঞান। আর এ বিজ্ঞান গ্রাম সমাজের সংগঠন, কাঠামো, প্রক্রিয়া, এর মৌলিক সামাজিক ব্যবস্থাসমূহ এবং পরিবর্তন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে থাকে। সাধারণত কৃষিনির্ভর সমাজকেই আমরা গ্রাম সমাজ বলে থাকি। সহজ কথায় যে বিজ্ঞান কৃষকদের সমাজকে
অধ্যয়ন করে তাই গ্রামীণ সমাজবিজ্ঞান।
কৃষিভিত্তিক সমাজ : প্রধানত কৃষিকে কেন্দ্র করেই যে সমাজে মানুষের মূল অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা পরিচালিত হয় তাকে বলা হয় কৃষি বা কৃষিভিত্তিক সমাজ। অর্থাৎ, কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি হলো কৃষি সমাজের মূল কথা। উল্লেখ যে, প্রায় ছয় হাজার বছর আগে লাঙলের আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে কৃষিভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
কৃষি সমাজের কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য : কৃষি সমাজের কাঠামো ও বৈশিষ্ট্য সম্পর্কিত আলোচনা কতকগুলো বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করা প্রয়োজন :
১. গ্রামীণ জনসম্প্রদায় : কৃষি সমাজের অস্তিত্বের সাথে গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। কৃষিজীবী জনসম্প্রদায় তাদের গ্রামের মধ্যেই সমগ্র জীবন অতিবাহিত করে। বস্তুত গ্রামই হলো তাদের কাছে সমাজ জীবনের ভিত্তি।
২. বৃত্তিগত বিন্যাস : কৃষি সমাজব্যবস্থায় গরু, মহিষ, শূকর, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গৃহপালিত পশুর রক্ষণাবেক্ষণের সাথে কৃষিকার্য ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। এ কারণে কৃষি সমাজে চাষাবাদের সাথে সাথে সাধারণত পশুপালনও করা হয়। বিভিন্ন কারিগর সম্প্রদায়ও যেমন- তাঁতি, কামার, কুমার এ সমাজে কৃষিজীবীদের সাথে বসবাস করে।
৩. আমরা বোধ (We feeling) : কৃষি সমাজের সদস্যদের মধ্যে সাধারণত গভীর ঐক্য ও সংহতি পরিলক্ষিত হয়। তাদের মধ্যে গভীর ‘আমরা বোধ’ বর্তমান থাকে। কৃষি সমাজের অধিবাসীদের মধ্যে একটা অন্তর্গোষ্ঠী বোধ (ingroup feeling) বর্তমান থাকে ।
৪. সহজ, সরল ও ধর্মভীরু : কৃষিভিত্তিক সমাজে মানুষের জীবনধারা সহজ, সরল প্রকৃতির এবং ধর্মীয় চেতনার দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত। কৃষিজীবীরা সাধারণত অন্ধ ধর্মবিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হয়ে থাকে। প্রকৃত প্রস্তাবে কে শিল্পসভ্যতার অভিশাপ থেকে তারা মুক্ত।
৫. পরিবারের ভূমিকা : এখানে পরিবারের মর্যাদার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা নির্ধারিত হয়ে থাকে। বিভিন্ন কৃষি পরিবারের বিবাহ, বিনোদন, ধর্ম, বৃত্তি প্রভৃতি বিষয়ে রীতিনীতি ও পন্থা পদ্ধতিগত পার্থক্য লক্ষণীয়।
৬. সাধারণ ধরনের শ্রমবিভাজন : কৃষি সমাজের সকল অধিবাসীকে অভিন্ন অর্থনৈতিক কর্ম প্রচেষ্টায় সামিল হতে দেখা যায়। এ ধরনের সমাজব্যবস্থায় কাজকর্মের খুব বেশি বিভাজন ও উপবিভাজন, যেমন— অনুপস্থিত, অনুরূপভাবে বিভিন্ন আর্থসামাজিক সংগঠনও দেখা যায় না। কৃষিভিত্তিক সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো ভারতের সমাজব্যবস্থা। আধুনিক ভারতের কৃষিব্যবস্থায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যাপক প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, কৃষিনির্ভর সমাজই কৃষিসমাজ। গ্রামীণ সমাজকাঠামোর সকলের মূলপেশা হলো এই. কৃষিকাজ। এর মাধ্যমেই গ্রামীণ সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক কর্মপ্রচেষ্টা পরিচালিত হয়। অন্যান্য সমাজের মত এ মাজেরও একটি নিজস্ব কাঠামো বিদ্যমান।