উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক আবুল মনসুর আহমদের ‘আয়না’ গল্পগ্রন্থের অন্তর্গত ‘হুযুর কেবলা’ গল্প
প্রসঙ্গ : পীর সাহেবের বুজরুকি কর্মকাণ্ড দেখে এমদাদের মনে সন্দেহের বীজ উপ্ত হওয়ার পরও সে হুযুরের উপর আস্থা রাখার যে চেষ্টা করছিল তা-ই আলোচ্য মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।থেকে চয়ন করা হয়েছে।
বিশ্লেষণ : মুরিদানে গিয়ে পীর সাহেব তাঁর শিষ্যদের নিয়ে প্রতিদিন মজলিসে বসতেন। সন্ধ্যায় পুরুষদের জন্য মজলিস বসত এবং রাতে এশার নামাযের পর অন্দর মহলে মেয়েদের জন্য ওয়াজ হতো। মেয়েদের ওয়াজে পুরুষদের প্রবেশাধিকার ছিল না। পীর সাহেবের মতে স্ত্রীলোকদের ধর্মকথা বুঝতে সময় বেশি লাগে। কারণ তারা নাকেস-আকেল । মেয়েদের ওয়াজের সময় পীর সাহেব বাড়িওয়ালার ছেলে রজবের সুন্দরী স্ত্রী কলিমনের দিকে ঘন ঘন দৃষ্টিপাত করতেন। তিনি বলতেন এ মেয়েটার মধ্যেই কিছু আছে। ভালো করে তাওয়াজ্জোহ দিলে একে আবেদা রাবেয়ার দরজায় পৌঁছে দেওয়া যেতে পারে। মেয়েদের মজলিসে ওয়াজ করার
সময় পীর সাহেবের প্রায়ই জবা আসত। সে জবাকে মুরিদগণ ‘ফানাফিল্লাহ’ বলত। এ ফানাফিল্লাহর সময় পীর সাহেব ‘জ্বলে গেলাম’, ‘পুড়ে গেলাম’ বলে চিৎকার করে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়তেন। এ সময় নাকি পীর সাহেবের রুহ আলমে খাল্ক থেকে আলমে আমরে পৌছে রুহে ইযদানীর সাথে ফানা হয়ে যেত এবং নূরে ইযদানী তাঁর চোখের উপর এসে পড়ত। কিন্তু সে নূরের জওয়া পীর সাহেবের চোখে সহ্য হতো না বলে তিনি চিৎকার করতেন। মেয়েদের মজলিসে ওয়াজ করার সময় পীর সাহেবের একটু বেশি জবা আসত। এসব ব্যাপার দেখে এমদাদের মনে একটু খট্কার সৃষ্টি হলো। কিন্তু সে জোর করে পীরের প্রতি নিজেকে ভক্তিমান রাখার চেষ্টা করল।
মন্তব্য : পীর সাহেবের কাণ্ডকারখানা দেখে এমদাদের মনে সন্দেহ হলেও সে ভক্তি বজায় রাখার চেষ্টা চালিয়ে যেতে লাগল ।