কিন্তু তাঁকে জাতীয় জাগরণের প্রভাত নক্ষত্র না বলে প্রভাত সূর্য বলাই উচিত।”— ব্যাখ্যা কর।

উৎস : উদ্ধৃত অংশটুকু মুক্তচিন্তার অধিকারী একজন সজাগ বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও লেখক কাজী আবদুল ওদুদ বিরচিত ‘বাংলার জাগরণ’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : বাংলার জাগরণের অগ্রদূত রাজা রামমোহন রায় সম্পর্কে প্রাবন্ধিক আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : রাজা রামমোহন রায় এক বিস্ময়কর প্রতিভার নাম। পাণ্ডিত্যের গভীরতায় মানসিকতার উদারতায়, সমাজ সংস্কারের তৎপরতায় তিনি ছিলেন বাঙালি সমাজে অদ্বিতীয়। তাঁর নানামুখী প্রতিভা এবং কর্মপ্রচেষ্টায় সমাজের সর্বস্তরে একটি পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে । ব্রহ্মজ্ঞান প্রচারের মধ্য দিয়ে তিনি সনাতন হিন্দু ধর্মে নতুন করে আলোড়ন তোলেন। পৌত্তলিকতা এবং অবতারে বিশ্বাসী হিন্দুধর্মে তিনি যোগ করলেন একেশ্বরবাদের ধারণা। এ ধর্মমত প্রতিষ্ঠায় তাঁকে অর্জন করতে হয়েছিল হিন্দু শাস্ত্রসহ অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় শাস্ত্র সম্পর্কে গভীর জ্ঞান, লড়াই করতে হয়েছিল গোড়া হিন্দুদের সাথে। এছাড়া তিনি সতীদাহ প্রথা নিবারণের জন্য লড়েছেন, মুদ্রাযন্ত্রের স্বাধীনতা, চীনের সাথে অবাধ বাণিজ্য, নারীর দায়াধিকার, বাংলা ব্যাকরণ, ইংরেজের শাসনের সমালোচনা ও সে ক্ষেত্রে পথনির্দেশ, এ একটি লোকেরই কর্মের প্রেরণা যুগিয়েছে। তাই প্রবন্ধকার তাঁকে জাতীয় জাগরণের প্রভাত নক্ষত্র না বলে; প্রভাত সূর্যই বলা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন। কেননা জাতীয় জীবনে তিনি মাত্র একটি চৈতন্যের সাড়া জাগিয়েই ক্ষান্ত হননি; সমাজের সর্বস্তরে উন্নতির জন্য যে আদর্শ তিনি জাতির সামনে রেখে গেছেন তা জাতির কাছে সর্বকালের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মন্তব্য: রামমোহন রায় বহুমুখী প্রতিভা এবং কর্মপ্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে বাংলার জাগরণে যে অবদান রেখেছেন সেজন্য তাকে প্রভাত নক্ষত্র না বলে প্রভাত সূর্য বলাই যুক্তিসংগত।

https://topsuggestionbd.com/%e0%a6%ac%e0%a6%be%e0%a6%82%e0%a6%b2%e0%a6%be%e0%a6%b0-%e0%a6%9c%e0%a6%be%e0%a6%97%e0%a6%b0%e0%a6%a3-%e0%a6%aa%e0%a6%ac%e0%a6%a8%e0%a7%8d%e0%a6%a7-%e0%a6%95%e0%a6%be%e0%a6%9c%e0%a7%80-%e0%a6%86/