অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের নারীবাদী চিন্তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা কর।
অথবা, কাজী নজরুল ইসলামের নারীবাদী চিন্তার বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বর্ণনা কর।
উত্তরা।৷ ভূমিকা : পৃথিবীতে অনেক দার্শনিক রয়েছেন যাদের দর্শন চিন্তা প্রকাশিত হয়েছে তাদের সাহিত্যের মধ্যে। বাঙালি ও পাশ্চাত্য দর্শনের ক্ষেত্রে এরূপ দেখা যায়। বাঙালি দার্শনিকদের দর্শন চিন্তা প্রতিফলিত হয়েছে বিভিন্ন গানে, উপন্যাসে ও নাটকে। কাজী নজরুল ইসলামের দর্শন চিন্তাকে এভাবেই আমরা দেখতে পাই। তিনি তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে মানব চিন্তা চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, বঞ্চনা প্রাপ্তি প্রভৃতিকে আঞ্চলিকতার সীমা ডিঙিয়ে আন্তর্জাতিকতার পরিসরে টেনে নিয়ে এসেছেন। সমাজের সকল শ্রেণির জন্যই তিনি লেখনী ধারণ করেছেন।
কাজী নজরুল ইসলামের নারীবাদী চিন্তা-চেতনা : কাজী নজরুল ইসলাম নারী অধিকার রক্ষার জন্য ছিলেন সোচ্চার। তিনি লেখনীর মাধ্যমে নারীর প্রতি তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন। নিম্নে তাঁর নারীবাদী চিন্তাচেতনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হলো :
১. সমতা : কাজী নজরুল ইসলাম নারী পুরুষের সমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। তার মতে, যে শিক্ষা একজন পুরুষকে দক্ষ অভিভাবকে পরিণত করে, সে একই শিক্ষা একজন নারীকেও একই মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে পারে।
২. অধিকার : নজরুল ইসলাম নারীর অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে লেখনি ধারণ করেছেন। তিনি নারীকে পুরুষের সহযোগী হিসেবে দেখেছেন।
৩. সমানাধিকার : তিনি নারী বা পুরুষ কাউকেই ছোট করে দেখেননি। উভয়কে সমানাধিকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন-
“বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”
৪. শ্রদ্ধা প্রদর্শন : তিনি নারী জাতিকে শ্রদ্ধার আসনে বসিয়েছেন। তাঁর মতে, কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাসের কারণে। উপমহাদেশের নারীরা অবহেলিত, বঞ্চিত, শোষিত। তাদের মুক্তির জন্য সমাজের বিবেকবানদের প্রতি আহ্বান জানান।
৫. নারীশিক্ষা : তিনি নারীদের অগ্রসরতার কারণ হিসেবে নারী শিক্ষার অনগ্রসরতাকে দায়ী করেছেন। তাই তিনি বাঙালি নারীদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার পরামর্শ দেন।
৬. অর্থনৈতিক ভিত্তি : নজরুল ইসলাম নারীর অনগ্রসরতার পিছনে অর্থনৈতিক অনগ্রসরতাকে দায়ী করেন। তিনি নারীদের স্বাবলম্বী হতে নির্দেশ দেন।
৭. ধর্মীয় ব্যাখ্যা : নজরুল হিন্দু ও খ্রিস্টধর্মে নারী সম্পর্কিত অধিকারের বর্ণনাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং ইসলাম ধর্মে বর্ণিত বক্তব্যকে সমর্থন করেন।কারণ ইসলাম ধর্মই নারী পুরুষের সমতার কথা বলে।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, নজরুলের রচনার একটা বড় অংশ জুড়েই রয়েছে নারী সম্পর্কিত চিন্তাভাবনা। তিনি তাঁর রচনায় নারীর দুঃখ দুর্দশার নিখুঁত চিত্র অঙ্কন করেছেন এবং নারী জাতি কিভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে পারে তার দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। নারী-পুরুষ উভয়ের যথাযোগ্য কল্যাণের মাধ্যমেই সুন্দর পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন তিনি।