ঐকতান’ কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের যে জয়গান গেয়েছেন তার পরিচয় দাও।

 উত্তরঃ ভূমিকা: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি তাঁর অন্তরের পরিচয়সমৃদ্ধ অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি যখন তাঁর কাব্যকীর্তির মূল্যায়নে ব্রতী হন, তখনই তাঁর দুর্বল দিকগুলো ধরা পড়ে। এই কবিতায় কবি তাঁর কাব্যের অসম্পূর্ণতা, সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলা এবং তাদের জীবনযাত্রার প্রতি অজ্ঞতার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

 কবিতায় কবি সাধারণ মানুষের যে জয়গান গেয়েছেন: ‘ঐকতান’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অন্তরের পরিচয়সমৃদ্ধ অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবির মৃত্যুর বছরই ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থে এটি প্রকাশিত হয়। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি যখন তাঁর কাব্যকীর্তির মূল্যায়নে ব্রতী হলেন, তখনই তাঁর দুর্বল দিকগুলো ধরা পড়ল। তাঁর কাব্যে সমগ্র জনগোষ্ঠীর অনুপস্থিতি তাঁর মনে দুঃখের কারণ।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ঐকতান’ কবিতাটি সাধারণ মানুষের প্রতি কবির গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার প্রকাশ। এই কবিতায় কবি নিম্নলিখিত শ্রেণীর মানুষের জয়গান গেয়েছেন:

১) কৃষক: কৃষক যারা ঘর্মাক্ত পরিশ্রম করে আমাদের খাদ্য সরবরাহ করে। কবি তাদের শক্তি, সাহস ও ধৈর্যের প্রশংসা করেছেন।

২) শ্রমিক: শ্রমিক যারা কলকারখানায় কাজ করে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। কবি তাদের পরিশ্রম ও ত্যাগের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।

৩) তাঁতি: তাঁতি যারা সুতো কেটে কাপড় তৈরি করে। কবি তাদের দক্ষতা ও শিল্পবোধের প্রশংসা করেছেন।

৪) জেলে: জেলে যারা নদী-সমুদ্র থেকে মাছ ধরে আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করে। কবি তাদের সাহস ও ঝুঁকিপূর্ণ জীবনযাত্রার জন্য তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করেছেন।

৫) কামার: কামার যারা লোহার কাজ করে বিভিন্ন সরঞ্জাম তৈরি করে। কবি তাদের শক্তি ও দক্ষতার প্রশংসা করেছেন।

৬) অন্যান্য: কবি শিক্ষক, ডাক্তার, কারিগর, ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরও জয়গান গেয়েছেন।

কবির বার্তা: কবি মনে করেন যে, এই সকল সাধারণ মানুষই সমাজের মেরুদণ্ড। তাদের পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমেই সমাজ ও দেশের অগ্রগতি সম্ভব। কবি তাদের প্রতি সম্মান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সমাজের সকলকে তাদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে আহ্বান জানিয়েছেন।

কাব্যের অসম্পূর্ণতা: কবি স্বীকার করেন যে তাঁর কাব্যে সমগ্র জনগোষ্ঠীর উপস্থিতি নেই। উচ্চবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণের কারণে তিনি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার স্পর্শ পাননি। ফলে তাঁর কবিতা সমাজের সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। 

সাধারণ মানুষের প্রতি অবহেলা: কবি অনুতপ্ত যে তিনি এতদিন সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা, তাদের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা, এবং তাদের অবদানের প্রতি মনোযোগ দেননি।

সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা: জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কবি সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি তাদের জীবনযাত্রার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং তাদের জীবনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরার জন্য নবীন কবিদের আহ্বান জানান।

উল্লেখযোগ্য বিষয়: কবি তাঁর ভুল স্বীকার করার সাহস দেখিয়েছেন। কবি সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতি ও সম্প্রীতির বার্তা দিয়েছেন। কবি নবীন কবিদের নতুন দিক উন্মোচনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন।

উপসংহার: ‘ঐকতান’ কবিতাটি রবীন্দ্রনাথের আত্মসমীক্ষার একটি অনন্য দৃষ্টান্ত। কবিতাটি আমাদের শেখানোর চেষ্টা করে যে, জীবনে ভুল হতে পারে, তবে ভুল স্বীকার করে নতুন করে শুরু করার সাহস থাকা উচিত। কবিতাটি আমাদের সাধারণ মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে এবং তাদের জীবনের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে অনুপ্রাণিত করে।