উৎস : ব্যাখ্যেয় গদ্যাংশটুকু বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ বিরচিত ‘নয়নচারা’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে চয়ন করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : মনুষ্য জীবনের চাহিদা ও প্রয়োজনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে গল্পকার উল্লিখিত মন্তব্য করেছেন।
বিশ্লেষণ : ময়ূরাক্ষী নদীর তীরের নয়নচারা গ্রামের মানুষ আমু। চিরটাকালই গ্রামে বাস করার কারণে বাইরের জগৎ সম্পর্কে তার কোন ধারণা ছিল না। দুর্ভিক্ষের কারণে আমু শহরের ফুটপাতে এসে আস্তানা গেড়েছে। সারাদিন সে রাস্তায় রাস্তায়, মানুষের দরজায় দরজায় একমুঠো ভাতের জন্য ঘুরে বেড়ায়। কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না। একদিন এক হোটেলের সামনে দাঁড়ানোর অপরাধে হোটেল মালিক তার দিকে দূর দূর করে তেড়ে আসে। আমুর ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। সে ক্ষিপ্ত হয়ে লোকটার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বেদম মার খেয়ে অবশেষে আমু রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকে। অনেকক্ষণ পর তার খেয়াল হয় সে একটা বন্ধ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। একটু পরে দরজাটা খুলে গেল। একটা মেয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে এসে আস্তে আস্তে শান্ত গলায় বলল, ‘নাও’। আমু চিন্তা করে বুঝতে পারল না কী নেবে সে। মেয়েটা তাকে দিতে চাচ্ছে, অথচ সে জানে না- কী চায় সে। হয়তো সে ভাতই চায়। কারণ এ মুহূর্তে ভাতই তার প্রয়োজন। এ পৃথিবীতে চাইবার অনেক কিছুই আছে, কিন্তু সেসব জিনিসের নাম আমুর জানা নেই। তার চাহিদা ও প্রয়োজন অতি সামান্য।
মন্তব্য: দুনিয়ায় বেঁচে থাকতে কী কী প্রয়োজন আমুর তা জানা নেই। তার চাহিদা একান্তই সামান্য। নিজের প্রয়োজন সম্পর্কেও সে ছিল অজ্ঞ।