উৎস : আলোচ্য অংশটুকু শামসুদ্দীন আবুল কালামের ‘পথ জানা নাই’ গল্পের অন্তর্ভুক্ত।
প্রসঙ্গ : প্রস্তাবিত নতুন রাস্তা সম্পর্কে জোনাবালির বক্তব্যটি বউয়ের কাছে পুনর্ব্যক্ত করতে গিয়ে নতুন জীবনের অভিযাত্রী গহুরালি এ কথা বলেছে।
বিশ্লেষণ : বহু শতাব্দী জুড়ে মাউলতলা ছিল অপরিবর্তনের ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। বাইরের সাথে তার কোন যোগাযোগ ছিল না। ফলে একই গতানুগতিক ছন্দে এই জীবনধারা প্রবাহিত হচ্ছিল। তাতে এক ধরনের নিরুদ্বেগ শান্তি ও স্বস্তির ছোঁয়া ছিল ঠিকই, কিন্তু ছিল না বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধির দীপ্তি। জোনাবালি হাওলাদার চল্লিশ বছর পর শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসে নাগরিক জীবনের জৌলুস ও সুখসমৃদ্ধি সম্পর্কে মাউলতলাবাসীদের কৌতূহলী করে তোলে। কৃষিভিত্তিক দারিদ্র্যপিষ্ট অর্থনীতি থেকে বেরিয়ে এসে সমৃদ্ধ জীবনের ছোঁয়া পেতে তারাও হয়ে ওঠে লালায়িত। দরিদ্র কৃষক গহুরালি প্রতি বছর অগ্রহায়ণ মাসে তার ক্ষেতের পাকা ধানের দিকে তকিয়ে পুলকিত হয়ে উঠত। কিন্তু গহরালি এবার আর তা ভাবতে পারে না। বরং তার মনে হয় এভাবে দুটি দুটি করে ধান খুঁটে জীবন কাটানোর চেয়ে জীবিকার অন্য কোন নতুন পথের সন্ধান করা ভালো। তাই সে তার পাঁচ কুড়া জমির মধ্য থেকে দুই কুড়া জমি রাস্ত এর জন্য দান করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। কেননা শহর ফেরত জোনাবালির সমৃদ্ধ জীবনের দিকে তাকিয়ে আর তার মুখের কথায় আস্থা স্থাপন করে সেও এখন আর প্রস্তাবিত নতুন রাস্তাটিকে শুধু একটি নিছক পায়ে চলা রাস্তা মনে করে না। এটিকে সে তার নতুন জীবনেরও রাস্তা বলে মনে করে। এই পথ ধরে সম্মুখে এগিয়েই সুখসমৃদ্ধিতে উপচানো এক নতুন জীবনে প্রবেশ করার স্বপ্নে সে – বিভোর হয়। শুধু একাই সে এই স্বপ্নে বিভোর হয় না। তার বউকেও করে তোলে তার অংশভাগী। যুক্তি দিয়ে তারা সবকিছু বিশ্লেষণ করতে পারে না। শুধু বিশ্বাস দিয়ে তাকে পরিপূর্ণ করে তুলতে চায়। দারিদ্র্যে যে জীবন মলিন হয়ে আসছে, সেই জীবনের বৃত্ত থেকে তারা মুক্তি চায়। নতুন রাস্তা সেই মুক্তির বারতাই যেন নিয়ে এসেছে তাদের সম্মুখে। তাই দূরের যে দিগন্তরেখা মিশে গেছে আকাশের নীলে, সেদিকে তাকিয়ে তারা এক অনাগত উজ্জ্বল ভবিষৎত্তের স্বপ্ন দেখে। নতুন রাস্তাটিকে তারা মনে করে সেই স্বপ্নপুরীতে প্রবেশের পথ।
মন্তব্য : পথ মানুষকে সুদূরের ইশারা বিলায়। কিন্তু পথের প্রান্তে গিয়ে শেষাবধি কি মিলবে, কেউই তা জানে না।