উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত ‘সভ্যতার সংকট’ শীর্ষক প্রবন্ধ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গ : বিশ্বাসভঙ্গের বেদনায় মর্মাহত রবীন্দ্রনাথ এন্ড্রুজ প্রমুখ মনীষীর মহত্ত্বের কথা বুঝাতে গিয়ে উল্লিখিত মন্তব্যটি করেছেন।
বিশ্লেষণ : বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শৈশব থেকে ইংরেজ সভ্যতার মহত্ত্বের সাথে পরিচিত ছিলেন। তিনি যে পরিবারে জন্মেছিলেন সে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির মানুষগুলো পাশ্চাত্য সংস্কৃতির ভক্ত ছিলেন। অল্প বয়সে রবীন্দ্রনাথ একবার ব্যারিস্টারি পড়তে বিলেত গিয়েছিলেন। তখন তিনি জন ব্রাইটের মতো মানবতাবাদী রাজনীতিকের বক্তব্য শুনে মুগ্ধ হয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্যে ছিল চিরন্তন ইংরেজদের শাশ্বত বাণী। কিন্তু ভারতবর্ষে ইংরেজরা সভ্যশাসনের নামে নিপীড়ন, নির্যাতন ও বঞ্চনার কলঙ্কময় ইতিহাস সৃষ্টি করে চলছিল। সাম্রাজ্য মদমত্ততায় তারা প্রতি পদে পদে মানবতাকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করছিল। এসব কারণে ইংরেজদের উপর আশৈশব লালিত শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসকে হারিয়ে ফেলেন রবীন্দ্রনাথ। এদের আচার, আচরণ ও মনমানসিকতার উপর বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি। অথচ ব্যক্তিগত জীবনে সৌভাগ্যক্রমে তিনি জন ব্রাইট, এন্ড্রুজ প্রমুখ মহাশয় ইংরেজদের মহত্ত্বের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ ঘটেছিল লেখকের। এমন মহত্ত্ব তিনি কোনদিন কোন জাতি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখতে পাননি। এসব মনীষী তাঁর বিশ্বাসকে ইংরেজদের প্রতি আমৃত্যু বেঁধে রেখেছিলেন। এ বিশ্ববিখ্যাত মনীষীদের বাণী সারা বিশ্বে জ্ঞান ও সভ্যতার আলো ছড়িয়েছে। এঁদের মধ্যে যথার্থ খ্রিস্টান, যথার্থ ইংরেজ ও যথার্থ মানুষকে প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের। এদের মহত্ত্ব তাঁকে মুগ্ধ ও বিমোহিত করেছিল। তাই সংকটের দিনে লেখক এদেরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছেন।
মন্তব্য : সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজদের চারিত্রিক ও নৈতিক অধঃপতনের সময়ও রবীন্দ্রনাথ এন্ড্রুজ প্রমুখ মনীষীর মহত্ত্বের উপর শ্রদ্ধা হারাননি। তাঁরা তাঁকে সংকটের সময় সান্ত্বনা যুগিয়েছেন।