উৎপাদনের উপাদানের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

অথবা , উৎপাদনের উপাদান সমূহের অবদানসমূহ আলোচনা কর।

উত্তর: প্রারম্ভিক কথা: উপযোগ সৃষ্টির জন্য যেসব উপাদানের প্রয়োজন পড়ে তাদেরকে উৎপাদনের উপাদানের সম্মিলিত প্রয়ানের ফলভূমি ও শ্রম। কালক্রমে আর একটি উপাদানের সংমিশ্রণ ঘটে তাহল মূলধন। বর্তমানে সংগঠন নামে আরেকটি উৎপাদনকে যোগ করা হয়েছে। সুতরাং উৎপাদনের উপাদান চারটি। যথা- ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন।

নিম্নে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলঃ

১. ভূমি (Land) : সাধারণ অর্থে ভূমি বলতে পৃথিবীর স্থলভাগ বা মাটিকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে ভূমি বলতে ভূপৃষ্ঠসহ প্রকৃতির যেসব অবাধ দান উৎপাদনে সাহায্য করে তাদেরকে একত্রে ভূমি বলে। এ অর্থে ভূ-পৃষ্ঠে মাটি ও তার উর্বরতা, খনিজ দ্রব্য বনজ সম্পদ, নদ-নদী, সমুদ্র, পাহাড়, পর্বত, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, সূর্যকিরণ, তাপ, আর্দ্রতা প্রভৃতি প্রকৃতির সকল দানই ভূমি।

অধ্যাপক মার্শালের মতে “ভূমি বলতে জমিতে ও পানিতে, বাতাসে, আলোতে এবং তাপে মানুষের সাহায্যের জন্য যে সকল পদার্থ ও শক্তি প্রকৃতি মুক্ত হস্তে দান করেছে তাদের সবাইকে বুঝায়।”

অর্থাৎ, উৎপাদনের প্রথম ও মৌলিক উপকরণ হচ্ছে ভূমি যা একমাত্র অনায়াস লভ্য উপাদান।

২. শ্রম (Labour) : উৎপাদন কাজে নিয়োজিত মানুষের কায়িক ও মানসিক সব পরিশ্রমকেই শ্রম বলা হয়। শ্রম উৎপাদনের একটা আদি ও অপরিহার্য উপাদান। শ্রম ছাড়া কোন উৎপাদনই সম্ভবপর নয়। শারীরিক ও মানসিক যে কোন প্রচেষ্টা যা দ্বারা অর্থ উপার্জন করা হয় তাকে শ্রম বলা হয়।

অধ্যাপক মার্শালের মতে, “পরিশ্রম হতে প্রাপ্ত আনন্দ লাভের উদ্দেশ্য ছাড়া সম্পূর্ণ বা আংশিক অপর কোন উপকারের উদ্দেশ্যে শারীরিক অথবা মানসিক পরিশ্রমকে শ্রম বলা হয়।”

মোট কথা শ্রম উৎপাদনের একটি আবশ্যকীয় উপাদান। শ্রম ছাড়া উৎপাদন সম্ভব নয়।

৩. মূলধন (Capital) : মূলধন উৎপাদনের তৃতীয় উপাদান। সাধারণ অর্থে মূলধন বলতে টাকা-পয়সা বা ব্যবসায়ে নিয়োজিত অর্থকে বুঝায়। কিন্তু অর্থনীতিতে মূলধন বলতে মানুষের শ্রমের দ্বারা যে জিনিসটি উৎপাদত হয়ে পুনরায় অধিকতর উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হয়, তাকে বুঝায়।

বম-বয়ার্ক (Bohni – Bawerk) এর মতে, “মূলধন হল উৎপাদনের উৎপাদিত উপাদান।”

অর্থনীতিবিদ উইকসেল বলেন, “সঞ্চিত শ্রম ও সঞ্চিত প্রাকৃতিক সম্পদের যুক্ত ফলই মূলধন।”

অর্থনীতিবিদ চ্যাপম্যান এর মতে, “যে সম্পদ কোন আয় সৃষ্টি করে অথবা উপার্জনে সহায়তা করে তাই মূলধন।”

আধুনিককালে মূলধনের আওতা ব্যাপক হয়েছে। উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন দ্রব্যসামগ্রীসহ অর্থের ঐ অংশ মূলধন হিসেবে বিবেচিত হয়, যা অধিক উৎপাদনের জন্য উৎপাদনে পুনরায় নিয়োজিত হয়।

৪. সংগঠন (Organization) : উৎপাদনের জন্য ভূমি, শ্রম ও মূলধনের আনুপাতিক সংগ্রহ, সংযোজন ও উৎপাদনের নিয়োগ করার প্রচেষ্টা ও নিপুনতাকে সংগঠন বলে। যিনি এই দায়িত্ব পালন করেন, তাকে সংগঠক বা উদ্যোক্তা বলা হয়।

বর্তমান যুগে উৎপাদন বা ব্যবসায়ের সফলতা ও ব্যর্থতা নির্ভর করে সংগঠনের নৈপুণ্যের উপর। সংগঠক দক্ষ হলে উৎপাদন লাভজনক হবে। আবার সাংগঠনিক ব্যর্থতা থাকলে উৎপাদনকাজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তাই বর্তমানে সংগঠন হল
উৎপাদনের অন্যতম উপাদান।

অধ্যাপক মিল ওয়ার্ড মনে করেন, “কর্ম ও কর্মীর মধ্যে সামঞ্জস্যপূর্ণ পারস্পরিক সম্পর্কই হল সংগঠন।” অধ্যাপক হানি বলেন, “কোন সাধারণ উদ্দেশ্য বা উদ্দেশ্যাবলি সাধন কল্পে বিশেষায়িত উপাদানসমূহের মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয় সাধন প্রক্রিয়াকে সংগঠন বলা হয়।”

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রোক্ষিতে বলা যায় উৎপাদনের কাজে ভূমি, শ্রম, মূলধন ও সংগঠন এই চারটি উপাদান ব্যবহৃত হয়। এদের যে কোন একটি বাদ দিয়ে উৎপাদন কাজ পরিচালনা করা সম্ভব নয়।