উদ্ঘাটমূলক গবেষণা বলতে কী বুঝ

অথবা, অনুসন্ধানমূলক গবেষণা কী?,.
অথবা, উদঘাটনমূলক গবেষণা কাকে বলে?
অথবা, উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা কী?
অথবা, অনুসন্ধানমূলক গবেষণা কাকে বলে?
অথবা, অনুসন্ধানমূলক গবেষণা বলতে
কী বুঝ?
উত্তর ভূমিকা : যে গবেষণায় নতুন বিষয় উদ্ঘাটন বা আবিষ্কার করা হয় তাকে উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা বলে। এ ধরনের গবেষণার বিষয়বস্তু নতুন বিধায় তা পরিচালনা করা খুব কষ্টসাধ্য। কেননা এ ধরনের গবেষণায় খুব স্বল্প গাইড লাইন পাওয়া যায়।
উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা : উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা সৃষ্টিশীল (Creative), মুক্ত মনের (Open minded) এবং নমনীয় (Flexible) হয় । এইডস (AIDS) এর উপর গবেষণা এ ধরনের উদ্ঘাটনমূলক গবেষণা। ১৯৮০ সালের দিকে যখন এইডস প্রথম দেখা দেয় তখন কেউ জানত না যে, এটি কি ধরনের রোগ অথবা এমনকি এটি আদৌ রোগ কি না।
কেউ জানত না এর কারণ কি, কিভাবে এর বিস্তার ঘটে, কেনই বা এর আবির্ভাব ঘটে। এ নিয়ে মেডিক্যাল এবং সামাজিক বিজ্ঞানে অনুসন্ধানমূলক গবেষণা কর্ম পরিচালিত হয় এবং এ সম্পর্কে পরে বিস্তারিত জানা সম্ভবপর হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞা : নিউম্যান (W. L. Neumau) তাঁর ‘Social Research Methods (Qualitative an Quantitative Approaches) শীর্ষক গ্রন্থে এ সম্পর্কে বলেন,
“Goals of exploratory research.
-Become familiar with the basic facts, setting, and concerns.

  • Create a general mental picture of conditions.
  • Formulate and focus questions for future research Generate new ideas, conjectures, or hypothesis
  • Determine the feasibility of conducting research.
  • Develop techniques for measuring and locating future data. “
    অর্থাৎ তিনি যা বলতে চান তা হলো এ গবেষণার মাধ্যমে কোন অবস্থার একটি সাধারণ সামাজিক চিত্র পাওয়া যায় ।
    এটি নতুন ধারণা, অনুমান বা প্রকল্প সৃষ্টি করে এবং এখানে অন্তর্দৃষ্টি উদ্দীপক বিষয়গুলোর বিচার বিশ্লেষণ করা হয় ।
    সেলটিজ (Selltiz) তাঁর ‘Research Methods is Social Relation ‘ গ্রন্থে বলেছেন, “অনুসন্ধানমূলক গবেষণার
    মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ চলক ও তাৎপর্যপূর্ণ অনুমান খুঁজে পেতে হলে কতকগুলো পদ্ধতি অনুসরণ করা প্রয়োজন। যথা :
    ১. প্রাসঙ্গিক সামাজিক বিজ্ঞান ও বইপত্রের পর্যালোচনা করা : গবেষক যে বিষয় বা সমস্যাটি সম্পর্কে গবেষণা করতে আগ্রহী, সে বিষয় বা সমস্যাটি নিয়ে আগে কেউ গবেষণা করেছে কি না বা কোনো পত্রপত্রিকায় এ বিষয় সম্বন্ধে কোনো প্রবন্ধ ছাপা হয়েছে কি না, তা গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত গ্রন্থপঞ্জিকার ক্যাটালগ দেখে খুঁজে বের করতে হবে এবং
    সেগুলোর পর্যালোচনার মাধ্যমে গবেষক গবেষণার বিষয়টির সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন চলক, উপাদান ও দিক সম্পর্কে জ্ঞানলাভ
    করতে পারেন। প্রত্যয়সমূহের সংজ্ঞাদান ও অনুমান গঠন করতে পারেন ।
    ২. গবেষণাধীন বিষয়টি সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের গবেষণা করা বা তাদের অভিজ্ঞতা বিবেচনা করা : মানুষের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা খুবই কম লিপিবদ্ধ করা হয়। প্রতিদিনের কর্মজীবনে আমরা নানা প্রকার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হই। তাই যে বিষয়টি সম্পর্কে গবেষণা করা হবে সে বিষয়ে যেসব ব্যক্তির অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের অভিজ্ঞতাকে পর্যালোচনা করে গবেষক প্রত্যয়সমূহের সংজ্ঞা দান, কোন কোন চলক গবেষণার অন্তর্ভুক্ত হবে তা নির্ধারণ এবং কার্যকরী অনুমান গঠন করতে পারেন।
    ৩. অন্তর্দৃষ্টি উদ্দীপক বিষয়গুলোর বিচার বিশ্লেষণ করা : কোনো বিষয়ে গবেষণা পরিচালনার জন্য উপযোগী ও ব্যাপক জ্ঞানের অভাব দেখা দিলে, তখন সে ক্ষেত্রে গবেষক অন্তর্দৃষ্টি উদ্দীপক কিছু বিষয়, ঘটনা বা অবস্থার নির্ধারণ করে এর বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে সম্যক ধারণা লাভ করতে প্রয়াস পান। অনেক ঘটনা বা বিষয় অনুসন্ধান
    করে চিত্র পাওয়া যায় না, অনেক সময়ই দেখা যায় যে, তাৎপর্যপূর্ণ কয়েকটি বিষয় বা ঘটনার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা লাভ করা সম্ভব ।
    সেলটিজ (Selltiz) আরো স্মরণ করিয়ে দেন যে, অনুসন্ধানমূলক গবেষণার মাধ্যমে গবেষণার সমস্যা সম্পর্কে| অন্তর্দৃষ্টি লাভ করা যায়, অনুমান গঠন করা যায় কিন্তু এ দ্বারা অনুমান যাচাই বা নিশ্চিত প্রমাণ করা যায় না। প্রায় সব অনুসন্ধানমূলক গবেষণায় এসব পদ্ধতিগুলোর এক বা একাধিক অনুসরণ করা হয়। তবে এ ধরনের অনুসন্ধানমূলক
    গবেষণাকে সর্বদাই কোন সুসংবদ্ধ গবেষণার প্রথম পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
    উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, নতুন বিষয়ে অর্থাৎ যে বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান নেই সা বিষয় নিয়ে এ ধরনের গবেষণা পরিচালিত হয় এবং এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে, সুসংবদ্ধ ও প্রণালিবন্ধ জ্ঞান, ধারণা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করা সম্ভব হয়।