অথবা, উদাহরণসহ একটি কেসের বর্ণনা দাও।
অথবা, উদাহরণসহ একটি কেসের আলোচনা কর।
অথবা, উদাহরণসহ একটি কেসের ব্যাখ্যা কর।
উত্তর।। মাঠকর্ম অনুশীলনে ঘটনা লিপিবদ্ধকরণ বা অতীত ঘটনাবলির সংরক্ষিত নথিপত্র তথ্যসংগ্রহের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসাবে বিবেচিত। বিশেষ করে ব্যক্তির মনো-সামাজিক সমস্যা সংক্রান্ত তথ্য উদ্ঘাটনে এটি অধিকতর কার্যকরী ও ফলপ্রসূ। এটি ব্যক্তির সমস্যার মূল উৎস উদ্ঘাটনে সহায়তা করে। ব্যক্তির অতীতে এ ধরনের কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা, হয়ে থাকলে এজন্য কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে অবগত হওয়া যায়। এর ফলে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধান পরিকল্পনা সহজতর হয়।
একটি কেসের উদাহরণ স্বল্পমেয়াদি কেস-২
১. ক্লায়েন্ট পরিচিতি
নাম : আমেনা বেগম
বয়স: ৪৫ বছর
স্বামীর নাম : মৃত গণি মিঞা
ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্র : কাপড়ের ব্যবসা
ঋণ গ্রহণের পরিমাণ: ২০ হাজার টাকা
ধর্ম : ইসলাম
জাতীয়তা : বাংলাদেশি
বৈবাহিক অবস্থা : বিবাহিত
সম্ভান সংখ্যা : ৬ জন
পরিবারের ধারণা : একক বর্তমান + স্থায়ী ঠিকান: দক্ষিণ ঋষিপট্রি, ভৈরব বাজার, কিশোরগঞ্জ।
২. কেস গ্রহণের যৌক্তিকতা : আমি দারিদ্র্য বিমোচন বস্তি উন্নয়ন কার্যক্রমের সাথে কাজ করার সময় একজন সমাজকর্মী হিসাবে দক্ষিণ ঋষিপট্টি এলাকা পরিদর্শনে যাই এবং সেখানে আমেনা বেগমের সাথে পরিচিত হই। আমেনা বেগম একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী যিনি নিজের চেষ্টায় স্বাবলম্বী হতে আগ্রহী এবং সে জন্য কঠোর পরিশ্রমও করে যাচ্ছে।কিন্তু আর্থিক ও শারীরিক কিছু সমস্যার কারণে তার স্বচ্ছলতার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য আমি তার কেস গ্রহণ করি।
৩. তথ্যসংগ্রহের কৌশল : আমেনা বেগম সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহের জন্য আমি নিম্নলিখিত কৌশল ব্যবহার করেছি। যথা : ১. সাক্ষাৎকার, ২. পর্যবেক্ষণ এবং ৩. যোগাযোগ ও পরামর্শ প্রদান ইত্যাদি।
৪. পেশাগত সম্পর্ক সৃষ্টি : আমি আমেনা বেগমের গৃহ পরিদর্শনে গিয়ে তার সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলি।আমেনা বেগমও আমাকে আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করে বিভিন্ন সুবিধা অসুবিধার কথা আমার নিকট খুলে বলে।এভাবে আমাদের মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক সৃষ্টি হয়।
৫. প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ইতিহাস ও প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ধারণা : ২০১০ সালে আমেনা বেগম পৌরসভা কর্তৃক পরিচালিত দারিদ্র্য বিমোচন ও ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির সাথে যুক্ত হয়। তিনি তখন পুঁজি সমস্যায় ভুগছিলেন তখন এ প্রতিষ্ঠানের ঋণ
গ্রহীতা অন্য একজন সদস্যের নিকট এই সংস্থার কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে পারেন এবং ৫০০০ টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত হন। তিনি দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে এই কর্মসূচিকে একটি মহৎ কর্মসূচি মনে করেন। তিনি সংস্থার দীর্ঘায়ু কামনা করেন।
৬. Study বা ঘটনা অনুধ্যান প্রক্রিয়া : আমি আমেনা বেগম সম্পর্কে অনুধ্যান করতে গিয়ে নিম্নলিখিত বিষয় অনুধ্যান করেছি।
*পারিবারিক অবস্থা : আমেনা বেগমের স্বামী শারীরিক অসুস্থতার কারণে ১৯৯৭ সালে মারা যান। সংসারে তার ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ে থাকলেও ছেলেরা বিয়ের পর পৃথক সংসার করছে এবং মেয়েদেরও বিয়ে হয়েছে। আমেনা বেগম বর্তমানে একাকী থাকেন।
*শারিরীক অবস্থা : আমেনা বেগম শারীরিকভাবে মোটামোটি সুস্থ বাতের অসুখ ছাড়া তার অন্য কোনো অসুখ নেই।
*অর্থনৈতিক অবস্থা : ১৯৯৭ সালে আমেনা বেগমের স্বামীর মৃত্যুর পর আমেনা বেগম আর্থিক সংকটে পতিত হন এবং বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসার চেষ্টা করলেও পুঁজির অভাবে সফল হননি। কিন্তু বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত হওয়ার পর সে
আর্থিকভাবে কিছুটা স্বচ্ছল হয়েছে।
*ঋণ গ্রহণের কারণ : আমেনা বেগম একজন পরিশ্রমী নারী। সে সর্বদা নিজে স্বাবলম্বী হতে আগ্রহী। কিন্তু পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে সে তার ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছিল না। এজন্য সে দারিদ্র্য বিমোচন, ক্ষুদ্র ঋণ ও বস্তি উন্নয়ন
কর্মসূচি হতে ২০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তার ক্ষুদ্র ব্যবসা পরিচালনা করছে।
*ঋণের টাকার ব্যবহার : আমেনা বেগম ২০০৮ সালে ৫০০০ টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে এ কর্মসূচির সাথে যুক্ত হন এবং কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। সফলভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করে ২০১০ সালে পুনরায় ১০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন এবং তার কাপড়ের ব্যবসা সম্প্রসারণ করেন এবং বর্তমানে ২৩ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণের মাধ্যমে তার ক্ষুদ্র ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনা করতে সক্ষম হচ্ছেন। তিনি মূলত বিভিন্ন আড়তে গিয়ে সুতি কাপড় কিনে আনেন এবং বাড়িতে বাড়িতে তা ফেরি করে বিক্রি করেন। তিনি কিস্তি ৪৮০ টাকা এবং সঞ্চয় ৩০ টাকা দিয়েও মাসে ৬-৭ হাজার টাকা আয় করেন।
*সামাজিক মর্যাদা : আমেনা বেগম একজন ধনী মহিলা না হলেও সমাজে সে সম্মানিত। সকলের কাছে সে পরিশ্রমী ও আত্মপ্রত্যয়ী হিসাবে পরিচিত।
*মানসিক অবস্থা : মানসিকভাবে আমেনা বেগম বেশ আত্মপ্রত্যয়ী। সে তার ব্যবসা সফলভাবে পরিচালনার জন্য মানসিকভাবে আশাবাদী।
৭. সমস্যা নির্ণয় : আমি আমেনা বেগম সম্পর্কে অনুধ্যানের পর তার নিম্নলিখিত সমস্যা নির্ণয় করতে সক্ষম হয়েছি।
*ব্যবসা আরো সম্প্রসারণের জন্য পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব
*বিশুদ্ধ পানির স্বল্পতা
*সঞ্চয়ে আগ্রহী নয়।
শিক্ষার অভাব
*বাল্যবিবাহ
৮: সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়া : একজন সমাজকর্মী হিসাবে আমেনা বেগমের সমস্যা সমাধানে আমি নিম্নলিখিত প্রক্রিয়া অনুসরণ করি।
*আমি আমেনা বেগমকে পুঁজি বাড়ানোর জন্য সঞ্চয় করার পরামর্শ দেই।
*পরবর্তীতে সে যেন সংস্থাটি হতে বেশি পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশ করি।
*দক্ষিণ ঋষিপট্টি এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের জন্য আরো নলকূপ স্থাপনের সুপারিশ করি।
*শিক্ষার কোনো বয়স নেই। আমি আমেনা বেগমকে বয়স্ক শিক্ষা গ্রহণ করতে বলি এবং এ বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।
*বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে অবগত করি।
৯. অনুসরণ-প্রক্রিয়া : আমেনা বেগমের সাথে একজন সমাজকর্মী হিসাবে প্রায়ই যোগাযোগ রাখি এবং মাঝে মাঝে তার গৃহ পরিদর্শনে যেতাম। আমি তার কর্মকাণ্ডের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখি এবং এভাবেই অনুসরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি।
১০. একজন সমাজকর্মী হিসাবে প্রদত্ত সুপারিশমালা :
*আমেনা বেগমকে যদি পুঁজির টাকা হিসাবে ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয় তাহলে সে উপকৃত হবে।
*দক্ষিণ ঋষিপট্টি এলাকায় স্বাস্থ্যসম্মত ল্যাপট্রিনের অভাব রয়েছে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
*এখানে বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল তাই আরো নলকূপ স্থাপন আবশ্যক।
*সদস্যদের সঞ্চয় গঠনে আগ্রহী করা প্রয়োজন।
*আমেনা বেগমের শিক্ষার ব্যবস্থা করা দরকার।
*বাল্যবিবাহ, কুসংস্কার, অশিক্ষা প্রভৃতি দূরীকরণে সচেতনতামূলক কর্মসূচির আয়োজন দরকার।
১১. সমাজকর্মী হিসাবে আমার অভিমত : শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী হিসাবে অতি অল্প সময়ে আমেনা বেগম সম্পর্কে কতটুক জানতে পেরেছি তা হলো আমেনা বেগম একজন আত্মপ্রত্যয়ী ও পরিশ্রমী মহিলা। পর্যাপ্ত সহায়তা প্রাপ্ত হলে সে দারিদ্র্য দূর করতে সক্ষম হবে বলে মনে করি। আমি তার সফল কর্মজীবন কামনা করছি।