উৎস : ব্যাখ্যেয় অংশটুকু বাংলা ছোটগল্পের সার্থক প্রণেতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘একরাত্রি’ শীর্ষক ছোটগল্প থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : তৎকালীন সমাজে আদালতজীবীদের বিশেষ কদর বুঝাতে গল্পের নায়ক এ কথা বলেছে।
বিশ্লেষণ : গল্পের নায়কের পিতা ছিলেন চৌধুরী জমিদারের নায়েব। তিনি জমিদারির কাজ ভালোই বুঝতেন। তাঁর ইচ্ছে ছিল ছেলেকে লেখাপড়া শিখিয়ে জমিদারের গোমস্তাগিরিতে লাগিয়ে দেবেন। কিন্তু গল্পের নায়ক ছিল উচ্চাভিলাষী। তার একান্ত ইচ্ছে ছিলো কালেকক্টারের নাজির না হতে পারলেও সে জজ আদালতের হেডক্লার্ক হবে। আর এজন্য সে পাড়ার নীলরতনকে আদর্শ মনে করত। সেও নীলরতনের মত কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে লেখা পড়ার কল্পনা করতো। তার এ উচ্চাকাঙ্ক্ষার পিছনে সবচেয়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে তৎকালীন আদালতজীবীদের সুযোগ-সুবিধা। নায়ক ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে তার পিতা আদালতের কর্মচারীদের সন্তুষ্ট রাখার জন্য কীভাবে পরিশ্রম করতেন। আদালতের কর্মচারীরা তার পিতার কাছে ছিল দেবতুল্য। কোন কোন ক্ষেত্রে তা দেবতাকেও হার মানাত। আদালতের এক এক জন কর্মচারী যেন তেত্রিশ কোটি দেবতার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংস্করণ। সিদ্ধিদাতা গণেশের জায়গায় লোকেরা আজ এদের বসিয়ে পূজা করে। নানা উপাচারে, উপাদানে এদের সন্তুষ্ট রাখতে মানুষ সব সময় ব্যস্ত থাকে। নায়কের বালক মনে এবিষয়টি গভীরভাবে রেখাপাত করেছিল।
মন্তব্য : তৎকালীন সমাজব্যবস্থায় আদালতজীবীদের একটি বিশেষ মূল্যায়ন এখানে ফুটে উঠেছে।