আশার লক্ষ্যসমূহ তুলে ধর।

উত্তর ঃ ভূমিকা ঃ আশা বাংলাদেশের বৃহৎ ক্ষুদ্র আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান। এটি শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা সৃষ্টি, ঋণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থান ও সঞ্চয়ের অভ্যাস গঠন এবং এ সবের মাধ্যমে দরিদ্র বিশেষত মহিলাদের উন্নয়ন প্রক্রিয়াই সম্পৃক্ত করে। এর দ্রুত বিকাশমান কর্মসূচি, সহজ শর্তে ঋণদান কার্যক্রম, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বা
মেয়াদ, স্বেচ্ছা সঞ্চয়, জীবন বিমা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে দেশে বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে। আশার নির্দিষ্ট কিছু লক্ষ্য রয়েছে যা তাকে অগ্রগামী হতে সহায়তা করেছে। তাই আশা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এক বড় অংশীদার হিসেবে গণ্য হতে পারে।
→আশার লক্ষ্যসমূহ ঃ এ দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভাগ্যোন্নয়নকে প্রাধান্য দিয়ে আশার কিছু লক্ষ্য নির্ধারিত হয়েছে। সেগুলো নিম্নে আলোচিত হলো :
১. সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ : সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিতকরণ আশার প্রধান লক্ষ্য প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু উপায়ে যাতে ব্যবহার সম্পন্ন হয় সেজন্য আশা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে ।
২. কর্মসংস্থানের সৃষ্টি ঃ আশা এ দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আগ্রহী। হাজার হাজার বেকার নর নারীকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও শিক্ষাদানের মাধ্যমে বিভিন্ন কর্মে প্রযুক্ত করে। তাছাড়াও এটি নারীদের মাঝে উদ্যোক্তার সৃষ্টি করে ও গ্রাম্য নারীদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
৩. আর্থিক সেবাদানঃ যে-কোনো ব্যবসায় বাণিজ্য, শিল্প পরিচালনাতে অর্থের প্রয়োজন। বলা বাহুল্য আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করে। তাই তারা ইচ্ছা থাকলেও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাও হতে পারে না। এ ক্ষেত্রে আশা তাদের মাঝে সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে সেই পথ সুগম করে দেয়।
৪. সচেতনতা সৃষ্টি ঃ জনসচেতনতা সৃষ্টি অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মত আশারও একটি লক্ষ্য। এজন্য দলের সদস্যদের মাঝে মৌলিক কিছু শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে অধিকার দায়িত্ব-কর্তব্য সম্পর্কে সজাগ করে তোলা হয় । ফলশ্রুতিতে সমাজ উন্নয়নে উদ্যোগী লোকের সংখ্যা বেড়ে যায়।
৫ মহাজনদের উপর নির্ভরতা হ্রাসকরণ ঃ আমাদের দেশে দরিদ্র কৃষক, ব্যবসায়ীরা সামান্য কিছু মূলধনের জন্য মহাজনদের উপর নির্ভর করে। আর এই মহাজনরা তাদেরকে উচ্চহারে সুদ ও ঋণ প্রদান করে। এতে দরিদ্র কৃষক, ব্যবসায়ীগণ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আশা তার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এই মহাজনদের ওপর নির্ভরতা হ্রাসকরণে কার্যকরী ভূমিকা রেখে চলেছে।
৬. মডেল উদ্ভাবনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন ঃ এ দেশে দারিদ্র্যের হার অত্যন্ত বেশি। দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে এই হার আরো বেড়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আশা মডেল উদ্ভাবনের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনকে তার অন্যতম লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারণ করে নিয়েছে। আর সেই লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নও করছে।
৭. নারী ক্ষমতায়ন ঃ আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে নারীদের মূল্যায়ণ খুব কম করা হয়। ফলে তারা পিছিয়ে পড়ছে। জাতীয় উন্নয়নের স্বার্থে নারীর ক্ষমতায়ন অত্যন্ত জরুরি। আশার অধিকাংশ কার্যক্রমই নারীর ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট
হয়ে থাকে।
উপসংহার ঃ পরিশেষে বলা যায় যে, আশা একটি বৃহৎ স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এ দেশের লাখ লাখ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে শিক্ষা, প্রশিক্ষণসহ সার্বিক সাহায্য ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে জাতীয় উন্নয়ন হয়েছে বেগবান। সুতরাং, আশা তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যসমূহের দ্বারা যে কার্যক্রম পরিচালনা করছে তা সত্যিই
প্রশংসার দাবি রাখে।