আশারিয়াদের পরমাণুতত্ত্ব বলতে কী বুঝ?

অথবা, আশারিয়াদের পরমাণুবাদ বলতে কী বুঝ?
অথবা, আশারিয়াদের পরমাণুতত্ত্ব লেখ।
অথবা, আশারিয়াদের পরমাণুতত্ত্বের সংক্ষিপ্ত ধারণা দাও।
অথবা, আশারিয়াদের পরমাণুবাদ সংক্ষেপে ব্যাখ্যা কর।
উত্তর৷ ভূমিকা :
মুসলিম চিন্তার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, মুতাজিলাদের বুদ্ধিবাদের সমালোচনা করে গড়ে উঠেছে আশারিয়া মতবাদ। আশারিয়াগণ বুদ্ধিকে সর্বোচ্চ স্থান দিতে চান নি। তবে জগৎ ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে তাদের পরমাণুবাদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
আশারিয়াদের পরমাণুবাদ : আশারিয়া চিন্তাবিদগণ যেসব মতবাদ দ্বারা মুসলিম চিন্তার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন তাদের মধ্যে পরমাণুবাদ অন্যতম। তারা তাদের পরমাণুবাদের দ্বারা এরিস্টটলের স্থির জগতের ধারণার বিরোধিতা করেন। মুতাজিলা চিন্তাবিদগণ তাদের চিন্তাদ্বারা এক প্রকার জাগতিক শৃঙ্খলা বা সার্বিক নিয়ম এবং একটি অনাদি বা জড়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন যার উপর বাহ্য আকার প্রয়োগ করে অসীম বস্তুসমূহ সৃষ্টি হয়েছিল। আশারিয়ারা তাদের এ মতের বিরোধিতা করেন। তাদের মতে, বিশ্বজগৎ কিছু আকস্মিক ধারার সমবায়ে গঠিত। যেগুলো প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে, সেগুলোকে আমরা জড়ের মধ্যে পাই না। যা আছে সেগুলোকে জড়বস্তু বলা যায় না, সেগুলো হলো
পরমাণু । আশারিয়ারা যে পরমাণুর কথা বলেছেন, তা Physical বা দৈহিক দ্রব্য নয়। এগুলো এক ধরনের অতিক্ষুদ্র কণা, যেগুলোকে আমরা আর বিভক্ত করতে পারি না। পরমাণুগুলোকে পরিবর্তন করা যায় না, তবে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে, অপরিবর্তনীয় পরমাণুর সমবায়ে গঠিত জগৎ পরিবর্তনশীল।
পরমাণুর বৈশিষ্ট্য : আমাদের এ পৃথিবীতে সবকিছুই নশ্বর প্রকৃতির। তবে পরমাণুগুলো অনন্ত। অসংখ্য পরমাণুর সমবায়ে এ জগৎ গঠিত। এদের সংখ্যা অসংখ্য এজন্য যে, আল্লাহর সৃষ্টি প্রক্রিয়া চলমান ধারায় প্রবাহিত। এ চলমান ধারায় প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পরমাণুর উদ্ভব ঘটেছে। পরমাণুগুলোর মূল বৈশিষ্ট্য হলো অস্তিত্ব নিরপেক্ষ। অস্তিত্ব
এমন এক গুণ যা আল্লাহ্ কর্তৃক পরবর্তীতে পরমাণুতে আরোপিত হয়। এগুলো অর্জনের আগে পরমাণুগুলো আল্লাহর সৃজনী শক্তিতে সুপ্ত বা বিকশিত অবস্থায় থাকে। পরমাণুর অস্তিত্বের যথার্থ অর্থ হলো আল্লাহর যুক্তি প্রমাণিত হওয়া।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আশারিয়ারা জগতের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে পরমাণুতত্ত্ব প্রদান করেন। তাদের।উদ্দেশ্য ছিল জড় জগতের ব্যাখ্যাকে প্রাণবন্ত করে তোলা। তারা তাদের পরমাণুর মাধ্যমে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দেন। যদিও আশারিয়াদের পরমাণুবাদের তুলনায় আধুনিক পদার্থবিজ্ঞান অনেক দূর এগেিয় গেছে। তবুও বলা যায় যে, তাদের পরমাণুবাদ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।