উৎস : আলোচ্য অংশটুকু বিদ্রোহী প্রাবন্ধিক কাজী নজরুল ইসলামের ‘রাজবন্দীর জবানবন্দী’ প্রবন্ধ থেকে নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গ : সমাজ, জাতি তথা দেশের যেখানেই অন্যায় বাসা বেঁধেছে সেখানেই কবির সত্য তরবারির শাণিত আঘাত সমান ভালে তৎপর রয়েছে- এ ঘোষণাই এখানে উচ্চারিত হয়েছে।
বিশ্লেষণ : অন্যায়, অসত্য ও অসুন্দর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজা তথা রাজশক্তি শুধু নিজের অবস্থানকেই ভঙ্গুর করে নাই, একইসাথে সমাজ, দেশ তথা জাতিকেও অবক্ষয়ের দিকে টেনে নিয়েছে। কেননা, রাজা যদি নিজের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করার দিকে মনোযোগ দেন, অর্থসম্পদ পাচার ও বিলাসী জীবনের দিকে নজর দেন তাহলে দেশ অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার দিকেই এগিয়ে যাবে সন্দেহ নেই। কারণ রাজা এরূপ ক্ষেত্রে নিজেই তো স্বেচ্ছাচারী। তাঁর সহযোগীরা আরো স্বেচ্ছাচারী। রাজা যা কিছু নিয়মকানুন বা আইন প্রণয়ন করেন সেখানে রাজশক্তির স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রাখা হয়। প্রজারা তাদের অপশাসন ও শোষণের নির্মম শিকার। ব্রিটিশ রাজকর্মচারীদের দিকে মাতৃসুলভ আচরণ আর দেশীয়দের দিকে বিমাতাসুলভ আচরণই তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য। কবি তাদের এ হীন ও জঘন্য উদ্দেশ্যের বিরুদ্ধেই সত্য তরবারির শানিত আক্রমণ তীব্রতর করেছেন। একই সাথে তদানীন্তন সমাজব্যবস্থা এবং জাতীয় জীবনের ত্রুটিগুলোও হয়েছে তাঁর তীব্র আক্রমণের লক্ষ্য। শোষক শ্রেণির জুলুম-অত্যাচারের মুখে এদেশের মানুষ নির্বাক পুতুলে পরিণত হয়েছিল। রাজশক্তির মতো প্রভাবশালীদের শঠতা, প্রতারণার পাল্লায় পড়ে এবং ধুরন্ধর অপআইনের অত্যাচারে ক্লিষ্ট হয়ে জনসাধারণ ছিল হতাশ ও অসহায়। জনগণের এ অবস্থার জন্য যারা দায়ী তাদের সবার বিরুদ্ধেই কবি বিদ্রোহ করেছিলেন। সমাজের যা কিছু অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার, অনিয়ম, শাস্ত্রের নামে ধোঁকাবাজি, এসবই ছিল তাঁর আক্রমণের লক্ষ্য। সাধারণ মানুষকে সচেতন করে আত্মসচেতন করে তোলা এবং ধুরন্ধর, প্রতারক ও তোষামোদকারীদের উৎখাত করাই ছিল কবির অঙ্গীকার।
মন্তব্য: কবি শুধু রাজার অন্যায় অসত্যের বিরুদ্ধেই বিদ্রোহ করেননি, প্রজা সাধারণের দারিদ্র্য ও অসন্তোষের মূল উিৎপাটনের জন্য বিদ্রোহ করেছিলেন।