উত্তর: ভূমিকাঃ পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করেছে। প্রবৃদ্ধি অর্জনের পথ বা পদ্ধতির মধ্যে পার্থক্য থাকলে দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জনকারি দেশের মধ্যে কতগুলো ক্ষেত্রে মিল আছে। যে সকল অর্থনীতিবিদ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে কাজ করছেন তাদের মতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য কতগুলো উপাদান কাজ করে। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ যাই হোক না কেন এ উপাদানগুলোর অভিন্ন। এই উপাদানগুলো হলো:
১. মানব সম্পদ (Human Resources)
২. প্রাকৃতিক সম্পদ (Natural Resources)
৩. মূলধন গঠন (Copital Formation)
৪. প্রযুক্তি (Technology)
নিম্নে এদের বর্ণনা করা হলো:
১. মানব সম্পদ ব্যবহারঃ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রথম কাজটিই করে মানুষ। তাই দক্ষ মানব সম্পদ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দেশে শুধু জনসংখ্যা থাকলেই হবে না, তা হতে হবে দক্ষ মানব সম্পদ। বর্তমানে চীন ও ভারত দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলে পৃথিবীর সেরা প্রবৃদ্ধি অজনকারি দেশের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। দক্ষ মানব সম্পদ তোলার জন্য নিম্মোক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ক. যুগোপযোগী বাস্তব সম্মত শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলন।
খ. দক্ষ, শিক্ষিত ও কারিগরি প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্য শ্রমের যোগান বৃদ্ধি।
গ. সম্পদের অপচয় না করে স্বল্প ব্যয়ে অধিক উৎপাদন করার প্রেষণা তৈরি করা।
ঘ. কাজের শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার শিক্ষা প্রদান করা।
২. প্রাকৃতিক সম্পদঃ প্রাকৃতিক সম্পদ ছাড়া প্রবৃদ্ধির চিন্তাও করা যায় না। উপযুক্ত ভূমি, বনভূমি, খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতা, পানি ও আবহাওয়ার অনুকূল উপস্থিতি যে কোনো দেশকে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করতে পারে।
যে সকল দেশে প্রাকতিক সম্পদ প্রচুর এবং যথাযথ ব্যবহার করতে পারে, সে দেশের প্রবৃদ্ধির হার বেশি। আবার সে সকল দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ প্রচুর থাকা সত্ত্বেও সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে না। সে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কম।
অর্থনীতিবিদগণ প্রাকৃতিক সম্পদ বলতে সে সকল সম্পদকে বুঝিয়ে থাকে না। তাহলোঃ
ক. ভূমি, ভূমির উর্বরতা, মাটির গুণাগুণ ও সূর্য্যের আলো,
খ. জ্বালানি তৈল, গ্যাস,
গ. বিভিন্ন ধরণের খনিজ সম্পদ,
ঘ. পরিবেশগত গুণাগুণ।
৩. মূলধন গঠন: মূলধন হলো উৎপাদনের উপাদান। মূলধন গঠনের উপর একটি দেশের সমৃদ্ধি নির্ভর করে। যে সকল দেশে মূলধন গঠনের হার বেশি সে সকল দেশের প্রবৃদ্ধির হারও বেশি। মূলধন সমৃদ্ধ দেশ নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করতে কিংবা শিল্প কারখানাকে প্রসারিত করতে পারে। মূলধন গঠন যেভাবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার বৃদ্ধি করতে পারে তা হলোঃ
ক. মূলধন দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সহায়ক।
খ. মূলধন বিনিয়োগ দেশের কর্মসংস্থান বাড়ায়।
গ. মূলধন প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারে।
ঘ. মূলধনের দেশের আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর পরিবর্তন কণ্ঠে উন্নত ও দ্রুত পরিবহন ও যোগাযোগ নিশ্চিত করতে পারে।
ঙ. আধুনিক প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন দক্ষ মানব সম্পদ তৈরিতে মূলধন বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
চ. দেশের উৎপাদন পদ্ধতির কলা-কৌশল পরিবর্তন ঘটিয়ে অত্যাধুনিক উৎপাদন কৌশল প্রচলনে মূলধন সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
৪. প্রযুক্তিঃ প্রযুক্তিগত পরিবর্তন বলতে বুঝায় এমন একটি প্রক্রিয়া যা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনয়ন করে নতুন পণ্য উৎপাদন করে বা সেবা নিয়ে আসে। জনগণের জীবনমান উন্নয়নেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে প্রযুক্তি সহায়ক ভূমিকা পালন করে। আধুনিক অর্থনীতিতে প্রযুক্তিকেই প্রবৃদ্ধির অন্যতম উপকরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।