অর্থনৈতিক উন্নয়নের পন্থা বা প্রক্রিয়াসমূহ কি কি?

রকেট সাজেশন
রকেট সাজেশন

উত্তর: ভূমিকা : কোন দেশের সার্বিক অবস্থার উন্নয়ন হলে তাকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বলে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পন্থা কিরূপ হওয়া উচিত তা নিয়ে অর্থনীতিবিদগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদ্ধতি সম্পরে সাধারণভাবে দুটি মতবাদ প্রচলিত আছে। তা হলোঃ

(১) ভারসাম্য বিশিষ্ট উন্নয়ন ও (২) অভারসাম্য বিশিষ্ট উন্নয়ন।

নিম্নে উভয় প্রকার পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হলোঃ

(১) ভারসাম্য বিশিষ্ট উন্নয়ন পদ্ধতিঃ প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ র‍্যাগানার নার্কস এবং রসেনটের রোডান ভারসাম্য বিশিষ্ট উন্নয়ন পদ্ধতির প্রবক্তা। এ পদ্ধতি অনুযায়ী দেশে বিনিয়োগ পদ্ধতি এমন ধরনের হওয়া উচিত যাতে অর্থনীতির বিভিন্ন খাত সমভাবে উন্নত হয়। অর্থাৎ ভারসাম্য উন্নয়ন পদ্ধতিতে অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে ভারসাম্য ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পুঁজি বিনিয়োগ করলে প্রত্যেকটি খাতের প্রসার ঘটে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হয়।অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে লক্ষ্যণীয়।

(১) স্বল্প উৎপাদন: (২) স্বল্প আয়: (৩) স্বল্প সঞ্চয়; (৪) স্বল্প বিনিয়োগ ও (৫) স্বল্প চাহিদা বিদ্যমান।

এই সকল বিষয় একটি দারিদ্র্য বৃত্ত তৈরি করে।

নার্কস মনে করেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে এ দারিদ্র্য বৃত্ত ভেঙ্গে ফেলা দরকার। এজন্য ভারসাম্য নার্কস এর মতে মূলত: চাহিদার স্বল্পতাই বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে। তাই বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য বাজার
উন্নয়ন পদ্ধতি বিশেষভাবে উপযোগী –
চাহিদাকে যথেষ্ট বৃদ্ধি করা উচিত।

অর্থাৎ অনুন্নত দেশের অর্থনৈতিক জড়তা ভাঙ্গাতে হলে ‘জোরে ধাক্কা’ দেওয়ার জন্য কয়েকটি বড় বড় খাতে একযোগে বিনিয়োগ করা উচিত।

(২) অ-ভারসাম্য বিশিষ্ট উন্নয়ন পদ্ধতিঃ অধ্যাপক হার্শম্যান ও হেন্স সিঙ্গার অ-ভারসাম্য পদ্ধতির প্রবক্তা। এ পদ্ধতি অনুযায়ী প্রথমে অর্থনীতির সবক্ষেত্রে সুষম বিনিয়োগের পরিবর্তে শুধু কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা বলা হয়। অনুন্নত ও স্বল্পোন্নত দেশে সম্পদের স্বল্পতার জন্য অর্থনীতির সবক্ষেত্রে এক সাথে সুষম বিনিয়োগ সম্ভব হয় না। এ জন্যই এ উন্নয়ন পদ্ধতির সমর্থকগণ মনে করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে একটি দেশের ভারী ও বৃহৎ শিল্পের উন্নয়নে পুঁজি বিনিয়োগ করা উচিত। কেননা ভারী শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগের ফলে দেশে একটি বিস্তৃত মূলধন ভিত্তি সৃষ্টি হয়। এর ফলে। পরবর্তীতে ভোগ্য পণ্য শিল্পগুলো দ্রুত সম্প্রসারিত হয়ে বড় শিল্পের সমপর্যায়ে আসে এবং দেশে ভারসাম্য উন্নয়ন ঘটে।

সিঙ্গারের মতে, পুঁজির স্বল্পতার জন্য অনুন্নত দেশে কৃষি ও অকৃষি খাতে ভারসাম্য বিেিনয়োগ সম্ভব নয়। সে জন্য এরূপ কৃষি প্রধান দেশে প্রথমে কষিখাতে সীমিত সম্পদের বেশির ভাগ বিনিয়োগ করা যুক্তিযুক্ত।

অ-ভারসাম্য বিশিষ্ট উন্নয়ন পদ্ধতিতে প্রাথমিক পর্যায়ে যে-কোনো একটির বিনিয়োগ পরে অন্যটিকে উন্নত করে।

উপসংহার: উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন উপরোক্ত যে-কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে অ-ভারসাম্য উন্নয়ন পদ্ধতি অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশে অধিক উপযোগী বলে বিবেচিত হয়ে থাকে।